অ্যানিমেশন কী? অ্যানিমেশন শিখে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার উপায় ২০২৫

বর্তমান সময়ে অ্যানিমেশনের মাধ্যমে নানা ধরনের গল্প বলা থেকে শুরু করে বিজ্ঞাপন, সিনেমা, গেমিং, এবং এডুকেশনাল কনটেন্ট তৈরি করা হয়, যা শুধু বিনোদন নয় বরং শিক্ষার মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে। বিশ্বজুড়ে এই খাতে চাহিদা বাড়ছে, আর অ্যানিমেশন ইন্ডাস্ট্রি বর্তমানে বিলিয়ন ডলারের বাজারে পরিণত হয়েছে। 

অ্যানিমেশন শিখে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার উপায়

এই খাতে ক্যারিয়ার গড়া মানে নিজের ক্রিয়েটিভিটিকে বাস্তব রূপ দেওয়া, যা অনেকেই আকর্ষণীয় হিসেবে দেখছে। নতুনরা যদি অ্যানিমেশন শিখে ক্যারিয়ার গড়তে চায়, তবে এই আর্টিকেল তাদের জন্য সহায়ক হতে পারে। 

এখানে আমরা অ্যানিমেশন কী, কীভাবে এই ক্ষেত্রে দক্ষতা তৈরি করা যায়, এবং কী ধরনের স্কিল অর্জন করা উচিত—সব কিছু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো, যাতে এনিমেশন ক্যারিয়ার শুরু করতে আগ্রহীরা উপকৃত হতে পারেন।

অ্যানিমেশন কী?

অ্যানিমেশন কী

অ্যানিমেশন এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে স্ট্যাটিক ইমেজ বা স্থির ছবি গুলোকে একসাথে সাজিয়ে এমনভাবে চলমান দেখানো হয় যেন ছবিগুলো বাস্তবে নড়ছে বা জীবন্ত হয়ে উঠছে। এ প্রক্রিয়ায় ছবির ফ্রেম গুলো খুব দ্রুতগতিতে বদলানো হয় যা পর্দায় গতিশীল চিত্র তৈরি করে। 

আপনি হয়তো দেখেছেন, পুরনো দিনের কার্টুন বা মুভিগুলোতে এই কৌশলটি প্রয়োগ করা হত। তখন কাগজে বা ফিল্মে প্রতিটি ফ্রেম হাতে আঁকা হতো, আর এখন এই কাজটি সফটওয়্যার দিয়ে দ্রুত এবং নিখুঁতভাবে করা সম্ভব।

বর্তমানে অ্যানিমেশন সিনেমা, গেমিং, এডুকেশন, বিজ্ঞাপন, এবং এমনকি চিকিৎসা ক্ষেত্রেও ব্যবহার হচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ, ডিজনি বা পিক্সারের মতো কোম্পানিগুলো অ্যানিমেশনকে ব্যবহার করে গল্প বলা এবং ভিজ্যুয়াল ইফেক্টের মাধ্যমে সিনেমাগুলোকে আকর্ষণীয় করে তোলে। 

তাই অ্যানিমেশন শুধু বিনোদনের জন্যই নয়, বরং শিক্ষামূলক এবং পেশাগত ক্ষেত্রেও ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। এনিমেশন ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকেই এর ক্রিয়েটিভ দিক এবং শিল্পের প্রতি আকর্ষিত হয়। এটি একটি এমন ক্ষেত্র যেখানে প্রযুক্তি এবং সৃজনশীলতার মিশ্রণ ঘটানো হয়।

এনিমেশন এর প্রকারভেদ

অ্যানিমেশন বিভিন্ন রকমের হতে পারে। এদের মধ্যে চারটি প্রধান প্রকারভেদ হলো টু-ডি অ্যানিমেশন, থ্রি-ডি অ্যানিমেশন, স্টপ-মোশন এবং মোশন গ্রাফিক্স। প্রতিটি প্রকারের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহারের ক্ষেত্র রয়েছে।

  • টু-ডি অ্যানিমেশন (2D Animation): এটি হলো দুই-মাত্রিক অ্যানিমেশন যেখানে চরিত্র ও অবজেক্টগুলো ফ্ল্যাট থাকে এবং গভীরতা থাকে না। সাধারণত এই ধরনের অ্যানিমেশন কার্টুন, বিজ্ঞাপন, এবং ছোট ভিডিও তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
  • থ্রি-ডি অ্যানিমেশন (3D Animation): থ্রি-ডি অ্যানিমেশন হলো তিন-মাত্রিক, যেখানে চরিত্র বা বস্তুগুলোকে এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে সেগুলো বাস্তব মনে হয়। ‘টয় স্টোরি’ এবং ‘ফ্রোজেন’-এর মতো চলচ্চিত্রে থ্রি-ডি অ্যানিমেশন ব্যবহৃত হয়।
  • স্টপ-মোশন অ্যানিমেশন (Stop-Motion Animation): স্টপ-মোশন অ্যানিমেশনে বাস্তব বস্তু ব্যবহার করা হয়, এবং প্রতিটি ফ্রেম আলাদাভাবে ছবি তোলা হয়। এটি ক্লে বা মডেল তৈরি করে কাজ করা হয়, উদাহরণ হিসেবে ‘ওয়ালেস অ্যান্ড গ্রোমিট’ উল্লেখ করা যায়।
  • মোশন গ্রাফিক্স (Motion Graphics): মোশন গ্রাফিক্সে সাধারণত টেক্সট, গ্রাফিক এবং বিভিন্ন শেপ ব্যবহার করে একটি গতিময়তা সৃষ্টি করা হয়। এটি অনেক বেশি বিজ্ঞাপন বা ভিডিও প্রেজেন্টেশন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

অ্যানিমেশন তৈরির সফটওয়্যার

অ্যানিমেশন তৈরির জন্য বর্তমানে অনেক জনপ্রিয় সফটওয়্যার রয়েছে, যেগুলোতে বিভিন্ন ধরনের কাজ করা যায়। এখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার নিয়ে আলোচনা করা হলো:

  • Adobe Animate: এটি মূলত টু-ডি অ্যানিমেশন তৈরির জন্য বেশ জনপ্রিয়। এর সাহায্যে ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এবং গেমিং কনটেন্টের জন্য অ্যানিমেশন তৈরি করা যায়। Adobe Animate দিয়ে সহজে স্টিক ফিগার এনিমেশন বা ছোট কার্টুন ভিডিও তৈরি করা যায়।
  • Blender: Blender একটি ওপেন-সোর্স সফটওয়্যার, যা থ্রি-ডি মডেলিং, রেন্ডারিং, এবং এনিমেশন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি ফ্রি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বা যারা নতুন শিখছেন, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ সফটওয়্যার।
  • Autodesk Maya: Maya মূলত থ্রি-ডি অ্যানিমেশন তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি অনেক বেশি প্রফেশনাল, এবং অনেক হলিউড মুভিতে এই সফটওয়্যারটি ব্যবহৃত হয়। থ্রি-ডি ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে চাইলে এটি শেখা উপকারী।
  • Cinema 4D: এটি মূলত মোশন গ্রাফিক্সের জন্য বেশ জনপ্রিয় একটি সফটওয়্যার। বিশেষ করে যারা ব্রডকাস্টিং এবং বিজ্ঞাপনের জন্য অ্যানিমেশন তৈরি করেন, তারা Cinema 4D ব্যবহার করেন।

এই সফটওয়্যারগুলো ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট স্কিল প্রয়োজন হয়, তবে এগুলো একবার শিখলে পরবর্তীতে অ্যানিমেশন প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়ে যায়।

কীভাবে একটি এনিমেশন তৈরি করবো?

কীভাবে একটি অ্যানিমেশন তৈরি করবো

একটি এনিমেশন তৈরি করার জন্য কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়:

  • স্টোরিবোর্ড তৈরি: প্রথমে অ্যানিমেশনের কনসেপ্ট বা গল্পটি পরিকল্পনা করে নেওয়া প্রয়োজন। এটি স্টোরিবোর্ড আকারে করা যায়, যেখানে প্রতিটি দৃশ্য বা ফ্রেম কেমন হবে, তার একটি ধারণা তৈরি হয়।
  • ডিজাইন ও মডেলিং: এর পর ডিজাইন পর্ব আসে, যেখানে চরিত্র ও ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরি করা হয়। টু-ডি এনিমেশনের ক্ষেত্রে এগুলো হাতে আঁকা বা ডিজিটালি তৈরি করা হয়, এবং থ্রি-ডি এনিমেশনের ক্ষেত্রে মডেলিং সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়।
  • রিগিং ও অ্যানিমেশন: মডেল তৈরি করার পর এগুলোকে চলমান বা জীবন্ত করার জন্য রিগিং করা হয়, যেখানে চরিত্র বা অবজেক্টের হাড় ও কাঠামো তৈরি করা হয়। এরপর রিগ করা অবজেক্টগুলো ফ্রেম বাই ফ্রেমে সাজিয়ে গতিশীল করা হয়।
  • এডিটিং ও রেন্ডারিং: অবশেষে পুরো অ্যানিমেশনটি এডিট করে রেন্ডার করা হয়, যা ফাইনাল আউটপুট হিসেবে ভিডিও বা ক্লিপ আকারে সংরক্ষণ করা হয়।

এনিমেশনে ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে আপনার কি ধরনের স্কিল অর্জন করা উচিত?

এনিমেশনে সফল ক্যারিয়ার গড়ার জন্য বেশ কিছু স্কিল থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রটি ক্রিয়েটিভিটি ও টেকনিক্যাল জ্ঞানের সমন্বয়ে একটি দারুণ সুযোগ এনে দেয় যেখানে নিজের কল্পনাশক্তি বাস্তবে ফুটিয়ে তোলা যায়। কিন্তু এটি শুধু কল্পনা বা সৃজনশীলতার উপর নির্ভরশীল নয়; এনিমেশন জগতে ভালো করার জন্য দরকার নির্দিষ্ট কিছু টেকনিক্যাল স্কিল ও সৃজনশীল দক্ষতা। এখানে কিছু প্রধান স্কিল নিয়ে আলোচনা করা হলো যা একজন এনিমেটর হিসেবে আপনার জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে।

১. ড্রয়িং ও স্কেচিং স্কিল

অ্যানিমেশনের জন্য বেসিক ড্রয়িং এবং স্কেচিং দক্ষতা অত্যন্ত জরুরি, বিশেষ করে টু-ডি অ্যানিমেশনে। আঁকতে পারার ক্ষমতা আপনার চরিত্র এবং দৃশ্যগুলোর বিভিন্ন মুভমেন্ট বুঝতে সাহায্য করে। আপনি যদি ভালো ড্রয়িং এবং স্কেচিং করতে পারেন, তবে এনিমেশন চরিত্রের এক্সপ্রেশন ও মুভমেন্ট তৈরি করা অনেক সহজ হয়ে যায়। এর মাধ্যমে শুধু অবজেক্ট বা চরিত্রের বাহ্যিক গঠন নয়, বরং তাদের ভাব, অঙ্গভঙ্গি, এবং আবেগও ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হয়।

২. টেকনিকাল স্কিল

একজন এনিমেটরের জন্য টেকনিকাল স্কিল অপরিহার্য। বর্তমানে বাজারে বেশ কিছু জনপ্রিয় সফটওয়্যার রয়েছে, যেগুলো এনিমেশন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। যেমন:

  • Adobe Animate এবং Toon Boom Harmony: এই সফটওয়্যারগুলো প্রধানত টু-ডি এনিমেশন তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়। Adobe Animate ব্যবহার করে সহজে টু-ডি অ্যানিমেশন তৈরি করা যায় যা সাধারণত কার্টুন এবং ছোট ছোট ভিডিও তৈরিতে কাজে লাগে। Toon Boom Harmony অনেক প্রফেশনাল এনিমেটরদের কাছে পছন্দের একটি টুল।
  • Blender এবং Autodesk Maya: থ্রি-ডি এনিমেশন তৈরির জন্য Blender এবং Autodesk Maya খুবই জনপ্রিয় সফটওয়্যার। Blender একটি ওপেন-সোর্স সফটওয়্যার, তাই এটি ফ্রি, এবং এটি থ্রি-ডি মডেলিং, এনিমেশন ও রেন্ডারিং-এর জন্য দুর্দান্ত একটি টুল। অন্যদিকে, Autodesk Maya অনেক প্রফেশনাল এনিমেটর ব্যবহার করে থাকেন, যা গেমিং এবং হলিউড মুভি প্রোডাকশনে ব্যবহৃত হয়।
  • Cinema 4D এবং After Effects: যারা মোশন গ্রাফিক্স বা বিজ্ঞাপনের জন্য কাজ করতে চান তাদের জন্য Cinema 4D এবং After Effects চমৎকার সফটওয়্যার। বিশেষ করে গ্রাফিক্স এনিমেশন, টাইটেল বা ডিসক্রিপশন এনিমেশন তৈরির জন্য এগুলো বেশ কার্যকর।

সফটওয়্যারগুলোর উপরে ভালো দক্ষতা থাকা এনিমেটর হিসেবে আপনার কাজের গতি এবং মান বাড়াতে সাহায্য করবে।

৩. ক্রিয়েটিভিটি এবং গল্প বলার ক্ষমতা

এনিমেশন মূলত গল্প বলার একটি মাধ্যম। এটি শুধুমাত্র চলমান ছবি নয়; এতে কল্পনা এবং গল্পকে জীবন দেওয়া হয়। একজন এনিমেটরকে সবসময় নতুন ও সৃজনশীল আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে হয় এবং কিভাবে সেই আইডিয়াগুলো ফুটিয়ে তোলা যায় সে সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হয়। কল্পনাশক্তির পাশাপাশি আপনার গল্প বলার ক্ষমতা থাকা দরকার যাতে একটি পূর্ণাঙ্গ এবং আকর্ষণীয় এনিমেশন তৈরি করতে পারেন।

গল্প বলার ক্ষেত্রে এনিমেটরদের মনে রাখতে হয় কিভাবে চরিত্রগুলো বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আচরণ করবে এবং কিভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া প্রভাব ফেলবে। এ জন্য গল্পের ফ্লো, চরিত্রের বিকাশ, এবং আবেগপূর্ণ মুহূর্তগুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা প্রয়োজন। এছাড়া, দর্শকদের সাথে সংযোগ স্থাপনের ক্ষমতা থাকা একটি ভালো এনিমেটরের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।

৪. কালার থিওরি ও ডিজাইন সেন্স

কালার থিওরি অর্থাৎ রঙের ব্যবহার এবং বিভিন্ন রঙের মানসিক প্রভাব সম্পর্কে জ্ঞান থাকা এনিমেশনে সঠিক আবহ ও মুড তৈরিতে সহায়ক। রঙ এবং ডিজাইনের ব্যাপারে ভালো বোঝাপড়া থাকলে একটি এনিমেশনে বিশেষ বৈচিত্র্য এবং পেশাদারিত্ব আনতে পারবেন।

উদাহরণস্বরূপ, একটি মজার বা হাস্যরসাত্মক দৃশ্যে উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার হতে পারে, আর একটি সিরিয়াস বা ডার্ক দৃশ্যে গাঢ় রঙ প্রাধান্য পায়। ডিজাইন সেন্স উন্নত করতে গেলে বিভিন্ন ডিজাইন, স্টাইল এবং কম্পোজিশন সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা দরকার।

৫. কম্পোজিশন এবং ফ্রেমিং দক্ষতা

ফ্রেমিং ও কম্পোজিশন দক্ষতা এনিমেটরদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এনিমেশন তৈরি করতে গেলে প্রতিটি দৃশ্য বা শটের একটি নির্দিষ্ট স্ট্রাকচার বা কম্পোজিশন প্রয়োজন হয়, যা দৃশ্যগুলোকে আরও অর্থবহ এবং আকর্ষণীয় করে তোলে। কম্পোজিশন এবং ফ্রেমিং সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকার ফলে আপনি দৃশ্যের ব্যাকগ্রাউন্ড, ফোরগ্রাউন্ড এবং চরিত্রের অবস্থান সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, যা দর্শকের মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়ক।

৬. টিমওয়ার্ক এবং কমিউনিকেশন স্কিল

এনিমেশন তৈরির কাজটি প্রায়ই টিমের মধ্যে ভাগাভাগি করে করতে হয়। এনিমেটর হিসেবে শুধুমাত্র নিজের কাজের উপর মনোযোগ দিলেই হয় না, পুরো টিমের সাথে ভালোভাবে যোগাযোগ রাখতে হয়। এ কারণে টিমওয়ার্ক এবং কমিউনিকেশন স্কিল ভালো থাকা প্রয়োজন।

প্রতিটি প্রজেক্টে অন্যান্য আর্টিস্ট, স্ক্রিপ্ট রাইটার, ডিরেক্টর এবং এডিটরদের সাথে মিলে কাজ করতে হয়, তাই ভালোভাবে আইডিয়া শেয়ার করতে পারা এবং একে অপরের সাথে সমন্বয় করে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ। একে অপরের কাজকে বুঝতে পারা এবং সমন্বয় সাধন করা এনিমেটরদের জন্য বিশেষ দক্ষতা।

৭. সময় ব্যবস্থাপনা এবং ধৈর্য

এনিমেশন একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। প্রায়ই একটি প্রজেক্ট শেষ করতে অনেক সময় এবং ধৈর্য প্রয়োজন হয়। এনিমেটরদের অনেক ছোট ছোট ফ্রেম নিয়ে কাজ করতে হয়, যেখানে প্রতিটি ফ্রেমের কাজ অত্যন্ত বিস্তারিত ও সময়সাপেক্ষ হতে পারে। কাজের প্রতিটি ধাপে ভালো সময় ব্যবস্থাপনা এবং ধৈর্য থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যারা এনিমেশনে ভালো করতে চান, তাদের জন্য সময় ব্যবস্থাপনা, ধৈর্য, এবং পরিকল্পনার দক্ষতা খুবই প্রয়োজন।

অ্যানিমেশন এবং এনিমেটর এর ভবিষ্যৎ কি?

অ্যানিমেশন এবং অ্যানিমেটর এর ভবিষ্যৎ কি

বর্তমানে অ্যানিমেশন শিল্পটি ক্রমাগত বিকাশ লাভ করছে। বিশেষ করে সিনেমা, গেমিং, শিক্ষা এবং মার্কেটিংয়ে অ্যানিমেশনের ব্যাপক চাহিদা দেখা যাচ্ছে। ভবিষ্যতে ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি আরও প্রসারিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে, এবং এতে অ্যানিমেশনের ব্যবহার আরও বেশি বাড়বে।

একজন দক্ষ এনিমেটরের জন্য এক্ষেত্রে ভালো ক্যারিয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে যাদের ভালো স্কিল এবং ক্রিয়েটিভিটি রয়েছে। অ্যানিমেশন ক্ষেত্রটি শুধু চাকরি নয়, বরং ফ্রিল্যান্সিং, কন্ট্র্যাক্ট এবং নিজের স্টুডিও তৈরির মতো ভিন্নধর্মী সুযোগ দেয়।

কেন ক্যারিয়ার হিসেবে এনিমেশনকে বেছে নিবেন?

অ্যানিমেশনকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। যারা ক্রিয়েটিভ, গল্প বলা পছন্দ করেন এবং কল্পনাশক্তি ব্যবহার করে কিছু তৈরি করতে ভালোবাসেন তাদের জন্য এটি আদর্শ। এনিমেশনে ক্যারিয়ার গড়ে তুললে সিনেমা, গেমিং, এডুকেশন, এবং বিজ্ঞাপনে কাজের সুযোগ পাওয়া যায়, যা একাধারে কনটেন্ট তৈরি এবং স্কিল শেয়ার করার ক্ষেত্র তৈরি করে।

অনেকেই এনিমেশনে ক্যারিয়ার বেছে নেয় কারণ এখানে নিজের ভাবনা এবং ক্রিয়েটিভিটি প্রকাশ করার সুযোগ থাকে। শুধু তা-ই নয়, গ্লোবাল মার্কেটপ্লেসে ভালো স্কিল থাকলে ফ্রিল্যান্সিং বা কনট্র্যাক্টের মাধ্যমে আয়ের সুযোগও আছে।

এনিমেটর হতে গেলে কতদিন সময় লাগতে পারে?

একজন ভালো এনিমেটর হতে সময় এবং প্রচেষ্টা দরকার হয়। সাধারণত একজন নতুনদের জন্য টু-ডি অ্যানিমেশনের বেসিক শিখতে ৬ মাস থেকে ১ বছর সময় লাগে। থ্রি-ডি অ্যানিমেশন এবং আরও অ্যাডভান্স টেকনিকের জন্য আরও বেশি সময় দরকার হতে পারে। অনেকেই থ্রি-ডি মডেলিং, রিগিং এবং এনিমেশন কন্ট্রোলের বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপ করতে এক থেকে দুই বছর সময় নেয়।

তবে এই সময়টি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে কারণ শেখার আগ্রহ, এক্সপোজার এবং অভ্যাসের উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। বিশেষ করে যদি আপনি প্রফেশনাল লেভেলে কাজ করতে চান তাহলে সময় এবং ধৈর্য্যের প্রয়োজন হয়।

শেষ কথা

আপনি যদি এই মুহূর্তে এনিমেশন নিয়ে ক্যারিয়ার গড়ার কথা ভাবছেন, তবে এটি একটি দারুণ সিদ্ধান্ত হতে পারে, কারণ এই খাতে দিন দিন চাহিদা বাড়ছে। অ্যানিমেশন আপনাকে আপনার সৃজনশীলতা প্রকাশ করার সুযোগ দেয় এবং একাধিক সেক্টরে কাজের সম্ভাবনা তৈরি করে। তবে, সফলতা পেতে চাইলে আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট স্কিল যেমন ড্রয়িং, সফটওয়্যার ব্যবহারের দক্ষতা, এবং গল্প বলার ক্ষমতা উন্নত করতে হবে। এই ক্ষেত্রে সফল ক্যারিয়ার গড়তে ধৈর্য, পরিকল্পনা, এবং ক্রিয়েটিভিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ে আরও জানুন এবং আপনার ক্যারিয়ার গড়ার যাত্রা শুরু করুন। 

Leave a Comment