ডিজিটাল মার্কেটিং এখন ব্যবসার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে বিভিন্ন ব্যবসা এবং প্রতিষ্ঠান তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিসকে প্রমোট করার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিংকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এক্ষেত্রে, SEO, কন্টেন্ট রাইটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ইমেইল মার্কেটিং, এবং ভিডিও মার্কেটিংয়ের মতো কাজগুলোর চাহিদা সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। এগুলোর মাধ্যমে শুধু ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়ানোই নয়, বরং সরাসরি বিক্রয় বৃদ্ধিও সম্ভব হচ্ছে।

ধারণা করা হয় যে, বর্তমানে প্রায় ৫৯.৫% মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, এবং এদের বেশিরভাগই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করেন। এই জন্য, ব্যবসাগুলো তাদের অনলাইন উপস্থিতি নিশ্চিত করতে এবং গ্রাহকের কাছে সহজে পৌঁছাতে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন কাজের উপর নির্ভর করছে।
এই আর্টিকেলে, আমরা এমন কিছু ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলোর চাহিদা বর্তমানে অনেক বেশি এবং ব্যবসার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে ইতিমধ্যে।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর কোন কাজগুলো বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয়?
বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এ অনেক ধরনের কাজের চাহিদা দেখা যায়, তবে কিছু কাজ বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যেমন, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (SMM) অন্যতম। সহজভাবে বলতে গেলে, SMM এর মাধ্যমে কোম্পানিগুলো ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে নিজেদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের প্রসার ঘটায়। এছাড়া, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) একটি প্রধান ক্ষেত্র। SEO এর মাধ্যমে ওয়েবসাইটগুলো গুগল বা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে ভালোভাবে র্যাংক করতে সক্ষম হয়, যা অর্গানিক ট্রাফিক বাড়ায়।
ইমেইল মার্কেটিং ও বেশ জনপ্রিয়, কারণ এর মাধ্যমে সরাসরি কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগ করা যায় এবং তাদেরকে নতুন অফার বা প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানানো হয়। এছাড়া, পে-পার-ক্লিক (PPC) অ্যাডস এবং কন্টেন্ট মার্কেটিং ও জনপ্রিয় কাজের তালিকায় রয়েছে। মূলত, ডিজিটাল মার্কেটিং এর সব ক্ষেত্রেই কাজের সুযোগ আছে, তবে এগুলোই বেশি চাহিদার মধ্যে রয়েছে।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর সব থেকে জনপ্রিয় কয়েকটি সেক্টর

ডিজিটাল মার্কেটিং এখন অনেক বড় এবং বিভিন্ন রকম কাজের মাধ্যমে টাকা ইনকাম করার সুযোগ রয়েছে । তবে সব কাজের চাহিদা সমান নয়। কিছু নির্দিষ্ট কাজের প্রতি চাহিদা সবচেয়ে বেশি, বিশেষত যেগুলো বর্তমানে ব্যবসার সফলতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিচে ডিজিটাল মার্কেটিং এর কিছু কাজের তালিকা দেয়া হলো যেগুলোর চাহিদা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি:
১. SEO (Search Engine Optimization)

SEO, বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, হলো এমন একটি কাজ যা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মূল ভিত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। মূলত, SEO এর মাধ্যমে কোন ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম দিকে নিয়ে আসা হয়। Google বা Bing এর মতো সার্চ ইঞ্জিনে প্রতিদিন কোটি কোটি সার্চ হয়। এজন্য ব্যব+++++সাগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তাদের ওয়েবসাইট যেন প্রথম পেজে আসে, কেননা বেশিরভাগ ইউজার প্রথম পেজের বাইরে যেয়ে ফলাফল দেখে না।
SEO দুটি মূল বিভাগে ভাগ করা যায়— অন-পেজ এবং অফ-পেজ অপটিমাইজেশন।
- অন-পেজ অপটিমাইজেশন: এতে ওয়েবসাইটের ভিতরের কন্টেন্ট এবং কোডিং পরিবর্তন করে তাকে সার্চ ইঞ্জিন ফ্রেন্ডলি করা হয়। যেমন, কিওয়ার্ড রিসার্চ করে সেই কিওয়ার্ডগুলো সঠিকভাবে ওয়েবপেজে ইন্টিগ্রেট করা।
- অফ-পেজ অপটিমাইজেশন: এতে ওয়েবসাইটের বাইরের লিংক বিল্ডিং এবং সোশ্যাল মিডিয়া শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে ওয়েবসাইটের অথরিটি বৃদ্ধি করা হয়।
SEO বিশেষজ্ঞরা মূলত কিওয়ার্ড রিসার্চ, কন্টেন্ট অপটিমাইজেশন, লিংক বিল্ডিং ইত্যাদি কাজ করে ওয়েবসাইটের সার্চ র্যাংকিং বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করেন। বর্তমানে SEO এর কাজের চাহিদা অনেক বেশি, কারণ সঠিক SEO ছাড়া একটি ওয়েবসাইট সহজে অর্গানিক ট্রাফিক আনতে পারে না।
এছাড়াও, Google এবং অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন তাদের অ্যালগরিদম নিয়মিত আপডেট করে, ফলে SEO বিশেষজ্ঞদের এই পরিবর্তনগুলোর সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া এবং ওয়েবসাইটগুলোকে সেই অনুযায়ী অপটিমাইজ করা জরুরি হয়ে পড়ে।
২. Content Writing (কন্টেন্ট রাইটিং)
Content Writing ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বর্তমান বিশ্বে প্রতিটি ব্যবসা বা ব্র্যান্ডের জন্য অনলাইন উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই উপস্থিতি বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন মানসম্মত এবং আকর্ষণীয় কন্টেন্ট। সহজভাবে বলতে গেলে, Content Writing এর মাধ্যমে এমন কিছু লেখা তৈরি করা হয়, যা ব্যবসার প্রচারণা বা প্রোডাক্টের বিবরণ দিয়ে থাকে।
একটি ভালো কন্টেন্ট এক্সপার্ট শুধু কিওয়ার্ড ব্যবহার করেই লেখা তৈরি করে না, বরং সেই কন্টেন্টের মাধ্যমে ব্যবসার মূল্য এবং বার্তাও গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়। কন্টেন্ট লেখার ক্ষেত্রে SEO ও খুব গুরুত্বপূর্ণ। SEO ফ্রেন্ডলি কন্টেন্টের মাধ্যমে ওয়েবসাইটের অর্গানিক ট্রাফিক বৃদ্ধি করা সম্ভব।
Content Writing এর বিভিন্ন কাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
- ব্লগ পোস্ট লেখা
- সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য ছোট কন্টেন্ট তৈরি
- ইমেইল মার্কেটিংয়ের জন্য ইমেইল টেমপ্লেট লেখা
- প্রডাক্ট ডিসক্রিপশন তৈরি করা
কন্টেন্ট লেখকদের কাজ ব্যবসার মার্কেটিং স্ট্রাটেজির একটি অংশ হিসেবে কাজ করে এবং প্রায় প্রতিটি কোম্পানি তাদের ব্যবসার জন্য কন্টেন্ট লেখকদের প্রয়োজনীয় মনে করে। এই জন্য কন্টেন্ট রাইটিং এর চাহিদা অনেক বেশি এবং প্রতিনিয়ত এটি বাড়ছে।
৩. Social Media Marketing (সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং)

Social Media Marketing বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অন্যতম বৃহৎ একটি সেগমেন্ট। এটি এমন একটি কৌশল যার মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর (যেমন: ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, এবং লিংকডইন) মাধ্যমে ব্যবসাগুলো তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের প্রচারণা করে থাকে।
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যবসাগুলো সহজেই তাদের টার্গেটেড অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বিশেষজ্ঞরা কন্টেন্ট তৈরি, ক্যাম্পেইন পরিচালনা, এবং অ্যাডস চালানোর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবসাকে সাহায্য করে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সরাসরি অডিয়েন্সের সাথে ইন্টার্যাক্ট করা এবং তাদের ফিডব্যাক সংগ্রহ করাও সম্ভব হয়।
Social Media Marketing এর কাজের মধ্যে থাকে:
- কন্টেন্ট ক্যালেন্ডার তৈরি করা
- সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের জন্য গ্রাফিক ডিজাইন তৈরি করা
- ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে অ্যাডস চালানো
- বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে অডিয়েন্সের সাথে যোগাযোগ রাখা
এই ধরনের মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ব্র্যান্ড অডিয়েন্সের সঙ্গে সরাসরি ইন্টার্যাক্ট করতে পারে, যা ব্যবসার ব্র্যান্ডিং এবং বিক্রয় বৃদ্ধিতে কার্যকরী হয়। তাই, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এক্সপার্টদের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৪. Email Marketing
ইমেইল মার্কেটিং ডিজিটাল মার্কেটিং এর অন্যতম পুরোনো, তবে এখনও কার্যকরী একটি মাধ্যম। এটি এমন একটি কৌশল, যেখানে ব্যবসাগুলো তাদের গ্রাহকদের কাছে ইমেইলের মাধ্যমে প্রমোশনাল মেসেজ পাঠায়। সহজ ভাবে বলতে গেলে, ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর একটি সরাসরি উপায় তৈরি হয়, যা অন্যান্য মাধ্যমের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর।
ইমেইল মার্কেটিং এর প্রধান কাজ হলো গ্রাহকদের সাথে সংযোগ বজায় রাখা, প্রোডাক্টের প্রমোশন করা এবং বিক্রয় বৃদ্ধি করা। বর্তমানে, অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের নতুন অফার, ডিসকাউন্ট, এবং প্রোডাক্ট সম্পর্কিত তথ্য সরাসরি ইমেইলের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেয়। তবে শুধু ইমেইল পাঠানোই যথেষ্ট নয়; সেই ইমেইলগুলোর কন্টেন্ট হতে হবে আকর্ষণীয় এবং সঠিকভাবে পরিকল্পিত।
ইমেইল মার্কেটিং এক্সপার্টদের প্রধান কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ইমেইল লিস্ট ম্যানেজমেন্ট: এখানে গ্রাহকদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়, যারা ইমেইল রিসিভ করতে আগ্রহী। এটি ব্যবসার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কেবলমাত্র আগ্রহী গ্রাহকদের কাছে ইমেইল পাঠানো হলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
- ইমেইল কন্টেন্ট তৈরি: ইমেইলের টাইটেল থেকে শুরু করে মূল বার্তা পর্যন্ত সবকিছু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভালো ইমেইল কন্টেন্ট তৈরি করা হলে, তা গ্রাহকদের কাছে প্রোডাক্টটি সম্পর্কে ভালো ধারণা দিতে পারে এবং তারা কিনতে আগ্রহী হয়।
- অটোমেশন: ইমেইল মার্কেটিংয়ে অটোমেশন একটি বড় ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইমেইল পাঠানো হয়, যেমন গ্রাহক যখন প্রথম সাইন আপ করে, তখন তাকে স্বাগতম ইমেইল পাঠানো ইত্যাদি।
ইমেইল মার্কেটিংয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এটি অন্যান্য কৌশলের তুলনায় অনেক কম খরচে কার্যকর হয়। এছাড়াও, ইমেইল পাঠানোর সময় ব্যবসাগুলো নির্দিষ্ট অডিয়েন্সকে লক্ষ্য করতে পারে, যার মাধ্যমে বিক্রয় বাড়ানোর সুযোগ থাকে।
৫. PPC (Pay-Per-Click) Advertising
PPC অ্যাডস হলো ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের এমন একটি মাধ্যম, যেখানে ব্যবসায়ীরা শুধুমাত্র তখনই টাকা প্রদান করে যখন কেউ তাদের অ্যাডে ক্লিক করে। এটি মূলত সার্চ ইঞ্জিন যেমন গুগল, অথবা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম যেমন ফেসবুকে পেইড অ্যাডস পরিচালনা করার একটি উপায়। সহজ ভাবে বলতে গেলে, PPC বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে দ্রুত ফলাফল পাওয়া সম্ভব, কারণ এটি সরাসরি টার্গেটেড অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছায়।
PPC অ্যাডস এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে কারণ:
- দ্রুত ফলাফল: SEO এর মতো অর্গানিক পদ্ধতির চেয়ে PPC দ্রুত ফলাফল দেয়। ব্যবসায়ীরা টার্গেটেড কিওয়ার্ড ব্যবহার করে সরাসরি তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কে অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাতে পারে।
- নিয়ন্ত্রণ: PPC এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা তাদের বাজেট, অ্যাড টাইমিং, এবং টার্গেটেড অডিয়েন্স সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। এর ফলে, প্রোডাক্টের প্রচারণা অনেক বেশি সুনির্দিষ্ট এবং কার্যকর হয়।
- ফ্লেক্সিবিলিটি: PPC প্ল্যাটফর্মগুলো অনেক বেশি ফ্লেক্সিবল। যেমন গুগল অ্যাডস, ফেসবুক অ্যাডস ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা সহজেই তাদের বিজ্ঞাপনী কৌশল পরিবর্তন করতে পারে এবং নতুন নতুন কৌশল প্রয়োগ করতে পারে।
PPC এক্সপার্টদের কাজ হলো টার্গেট কিওয়ার্ড রিসার্চ করা, কনভার্সন রেট বৃদ্ধি করা এবং অ্যাড কেম্পেইন অপটিমাইজ করা। এক্ষেত্রে বাজেটের সঠিক ব্যবহার এবং কাস্টমারদের কার্যকরভাবে আকৃষ্ট করার দক্ষতা প্রয়োজন। বর্তমানে PPC অ্যাডস এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারণ অনেক ব্যবসা নতুন মার্কেটে প্রবেশ করতে এটি ব্যবহার করে দ্রুত ফলাফল পেতে চায়।
৬. Influencer Marketing
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং হলো ডিজিটাল মার্কেটিং এর আরেকটি শক্তিশালী মাধ্যম, যেখানে সামাজিক মিডিয়াতে জনপ্রিয় ব্যক্তিরা কোনো প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কে প্রচার করে। সহজভাবে বলতে গেলে, সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে ব্র্যান্ড প্রমোশন করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ইনফ্লুয়েন্সাররা তাদের ফলোয়ারদের কাছে প্রোডাক্টটি সম্পর্কে জানান, যার ফলে সেই প্রোডাক্টটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
বর্তমানে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের চাহিদা অনেক বেশি, কারণ:
- গ্রাহকদের উপর আস্থা: ইনফ্লুয়েন্সাররা সাধারণত তাদের ফলোয়ারদের কাছ থেকে আস্থা অর্জন করে থাকে। যখন তারা কোনো প্রোডাক্টের প্রশংসা করে, তখন তাদের ফলোয়াররা সেই প্রোডাক্টটি ক্রয় করতে আগ্রহী হয়।
- কম খরচে প্রচারণা: ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং অন্যান্য প্রচারণার কৌশলের তুলনায় অনেক কম খরচে কার্যকর হতে পারে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে কাজ করে দ্রুত তাদের প্রোডাক্ট পরিচিত করতে পারে।
৭. Video Marketing

ভিডিও মার্কেটিং হলো ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের এমন একটি মাধ্যম, যেখানে ভিডিও কনটেন্ট ব্যবহার করে প্রোডাক্ট বা সার্ভিসর প্রচার করা হয়। বর্তমানে ভিডিও কনটেন্ট অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে ইউটিউব, ফেসবুক, এবং ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে। সহজ ভাবে বলতে গেলে, ভিডিও কনটেন্ট গ্রাহকদের কাছে প্রোডাক্টটি আরও ভালোভাবে উপস্থাপন করে এবং তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে।
ভিডিও মার্কেটিংয়ের চাহিদা কেন এত বেশি?
- দৃশ্যমান উপস্থাপনা: ভিডিও কনটেন্টের মাধ্যমে প্রোডাক্ট বা সার্ভিসর দিকগুলো দৃশ্যমানভাবে তুলে ধরা যায়, যা অডিয়েন্সের কাছে অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়।
- বেশি এঙ্গেজমেন্ট: ভিডিও কন্টেন্ট অন্যান্য কন্টেন্টের তুলনায় বেশি এঙ্গেজমেন্ট সৃষ্টি করে। মানুষ সাধারণত ভিডিও দেখতে বেশি পছন্দ করে, তাই এটি ব্যবসায়ীদের জন্য একটি শক্তিশালী মাধ্যম।
- ট্রেন্ডিং কন্টেন্ট: ভিডিও কন্টেন্ট বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ড করছে। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ভিডিও পোস্ট করলে দ্রুত শেয়ার হয় এবং অডিয়েন্সের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যেতে পারে।
ভিডিও মার্কেটিং বিশেষজ্ঞদের কাজ হলো প্রোডাক্টের জন্য আকর্ষণীয় ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করা, যা ব্র্যান্ডের মেসেজ ভালোভাবে পৌঁছে দিতে পারে। এটি ব্যবসার বিক্রয় বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং বর্তমানে এর চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৮. Affiliate Marketing
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো এমন একটি ডিজিটাল মার্কেটিং কৌশল, যেখানে ব্যক্তিরা অন্য কারও প্রোডাক্ট বা সার্ভিস প্রমোট করে কমিশন আয় করে। সহজ ভাবে বলতে গেলে, আপনি অন্য কারও প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের প্রচারণা করেন এবং যদি কেউ সেই প্রোডাক্ট কেনে, তাহলে আপনি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন পান। এটি এক ধরনের পারফরম্যান্স-বেসড মার্কেটিং, যেখানে আপনি শুধুমাত্র সফল বিক্রয় বা রেফারেলের ভিত্তিতে আয় করেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কেন এত জনপ্রিয়?
- কোনও প্রোডাক্ট তৈরির প্রয়োজন নেই: আপনি নিজের কোনো প্রোডাক্ট তৈরি করতে না পারলেও অন্যের প্রোডাক্ট প্রমোট করতে পারেন এবং আয় করতে পারেন। এটি ক্ষুদ্র ব্যবসা কিংবা একক ব্যক্তিদের জন্য একটি বড় সুবিধা।
- নির্দিষ্ট বাজেটের প্রয়োজন নেই: অন্যান্য মার্কেটিং কৌশলের তুলনায়, এখানে বিজ্ঞাপনে খরচ করতে হয় না। শুধুমাত্র প্রোডাক্ট প্রমোট করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া বা নিজের ওয়েবসাইট ব্যবহার করা যায়।
- ফ্লেক্সিবিলিটি: অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে আপনি নিজের সুবিধা অনুযায়ী কাজ করতে পারেন। কোনো নির্দিষ্ট সময়ের বাধ্যবাধকতা নেই, এবং এটি অনেক ফ্লেক্সিবল।
বর্তমানে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে ব্লগার, ইউটিউবার এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের মধ্যে। এখানে অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করে প্রোডাক্ট প্রমোট করা হয় এবং সেই লিংক থেকে বিক্রয় হলে অ্যাফিলিয়েট কমিশন পাওয়া যায়। বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম যেমন অ্যামাজন, আলিবাবা ইত্যাদি এই ধরনের প্রোগ্রাম অফার করে।
৯. Conversion Rate Optimization (CRO)
CRO একটি কৌশল, যার মাধ্যমে ওয়েবসাইটের ভিজিটরদের ক্রেতায় পরিণত করা হয়। সহজ ভাবে বলতে গেলে, সাইটের ডিজাইন, কন্টেন্ট, এবং লেআউটকে এমনভাবে অপটিমাইজ করা হয়, যা গ্রাহকদের ক্রয় করার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে।
CRO এক্সপার্টদের কাজ হলো গ্রাহকদের ব্যবহারের ধরণ বিশ্লেষণ করা এবং ওয়েবসাইটের সেই অনুযায়ী পরিবর্তন আনা।
১০. Data Analytics
ডেটা অ্যানালিটিক্স ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন মার্কেটিং কৌশল কার্যকর হচ্ছে কি না, তা বিশ্লেষণ করার জন্য ডেটা অ্যানালিটিক্স ব্যবহার করা হয়।
ডেটা অ্যানালিটিক্স এক্সপার্টরা বিভিন্ন মার্কেটিং কেম্পেইন থেকে সংগৃহীত ডেটা বিশ্লেষণ করে এবং সেই অনুযায়ী কৌশল ঠিক করে।
এগুলোই ছিল ডিজিটাল মার্কেটিং এর কিছু জনপ্রিয় এবং চাহিদাসম্পন্ন কাজ, যেগুলো বর্তমানে মার্কেটে বেশ কার্যকরী হয়ে উঠেছে।
উপসংহার
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বর্তমান যুগে বিভিন্ন কাজের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। মূলত, SEO, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, কন্টেন্ট ক্রিয়েশন, ইমেইল মার্কেটিং, এবং ভিডিও মার্কেটিংয়ের মতো কাজগুলোই সবচেয়ে বেশি চাহিদা পেয়েছে। এগুলো ব্যবসাকে অনলাইনে জনপ্রিয় করতে এবং গ্রাহকের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
তো আজকের এই আর্টিকেল এই পর্যন্তই যদি এরকম আরো ইন্টারেস্টিং বিষয় নিয়ে জানতে চান তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভালোভাবে ভিজিট করতে পারেন।