সফল ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন ২০২৫

বর্তমানে ই-কমার্স বিজনেস শুধু একটা ট্রেন্ড না, বরং এটা অনেকের জন্য ফুলটাইম ক্যারিয়ার আর প্যাসিভ ইনকামের বড় সুযোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনি যদি ২০২৫ সালে একটা সফল ই-কমার্স বিজনেস চালু করতে চান, তাহলে শুধু একটা ওয়েবসাইট বানিয়ে বসে থাকলে হবে না—কাস্টমার আনতে হবে, ব্র্যান্ড তৈরি করতে হবে, আর স্মার্ট মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করতে হবে। অনেকেই ভাবেন, ই-কমার্স মানেই বিশাল ইনভেস্টমেন্ট দরকার, কিন্তু সত্যি বলতে চাইলে কম বাজেটেও শুরু করা সম্ভব, শুধু সঠিক প্ল্যান থাকতে হবে।

সফল ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন

এই গাইডলাইনে একদম শুরু থেকে কীভাবে ই-কমার্স শুরু করবেন, কাস্টমার আনবেন, এবং কত ইনভেস্টমেন্ট লাগতে পারে—এসব নিয়ে বাস্তবসম্মত এবং এক্সপার্ট টিপস দেওয়া হয়েছে। আপনি যদি সত্যিই ই-কমার্স নিয়ে সিরিয়াস হন, তাহলে এই গাইড আপনার জন্য একটা পারফেক্ট ব্লুপ্রিন্ট হবে বলে আশা করি। তাহলে চলুন এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত নিচে জেনে নেয়া  যাক। 

ই-কমার্স ব্যবসা কীভাবে শুরু করবেন?

ধরেন, আপনার মাথায় একটা দারুণ প্রোডাক্ট আইডিয়া আছে। এখন যদি ঠিকঠাক প্ল্যানিং না করেন, তাহলে সেটার থেকে ভালোভাবে প্রফিট বের করা কঠিন হয়ে যাবে। ই-কমার্স শুরু করতে হলে তিনটা জিনিস প্রথমেই ফিক্স করতে হবে—

  •  কী বিক্রি করবেন?
  •  কাদের কাছে বিক্রি করবেন?
  •  কীভাবে বিক্রি করবেন?

এখন এই তিনটা প্রশ্নের উত্তর যদি পরিষ্কার হয়, তাহলে আপনার অর্ধেক কাজ হয়েই গেল!

১) নিশ (Niche) সিলেকশন:

নিশ মানে যেই ক্যাটাগরিতে আপনি কাজ করবেন। নিস সিলেকশন এর ক্ষেত্রে এমন একটি ক্যাটাগরি বেছে নিতে হবে, যেখানে ভালো ডিমান্ড রয়েছে এবং কম্পিটিশন কম। উদাহরণ স্বরূপ, যদি সবাই জামা-কাপড় বিক্রি করছে, তাহলে আপনি স্পোর্টসওয়্যার বা প্রেগনেন্সি ড্রেস বিক্রি করতে পারেন, একটি বড় সেক্টরে না গিয়ে এর ছোট ছোট স্পেসিফিক সেক্টরগুলোতে কাজ করা।

একটা ভালো নিশ খুঁজতে—

  •  Google Trends দেখে নিতে পারেন কোন প্রোডাক্টের ট্রেন্ড বাড়ছে।
  •  Amazon, Daraz, eBay-এর বেস্ট সেলার লিস্ট চেক করতে পারেন।
  •  সোশ্যাল মিডিয়ায় কাস্টমারদের কমেন্টস, রিভিউস পড়তে পারেন।

২) বিজনেস মডেল চুজ করা:

ই কমার্স বিজনেস করতে হলে অবশ্যই আপনার ই-কমার্স বিজনেস কীভাবে চলবে, সেটা বুঝতে হবে। বর্তমান সময়ে অনলাইনে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির বেশ কয়েকটি বিজনেস মডেল জনপ্রিয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যঃ

  • নিজস্ব স্টক ভিত্তিক ই-কমার্সঃ আপনার যদি নিজস্ব কোন প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস থাকে তাহলে আপনি সেগুলোকে এর কাছে উপস্থাপন করে ইনকাম করতে পারবেন।  এই পদ্ধতি সবথেকে জনপ্রিয় এবং কার্যকর বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। আপনার যদি নিজস্ব মূলধন এর পাশাপাশি মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি থাকে তাহলে এই বিজনেস মডেল আপনার জন্য সেরা হবে।
  • ড্রপশিপিং – কোনো স্টক না রেখে সরাসরি সাপ্লায়ার থেকে পণ্য ডেলিভারি করা হয়। এই বিষয়ে আমরা বিস্তারিত ইতিমধ্যে আর্টিকেল লিখেছি যা আপনি চাইলে পড়ে নিতে পারেন।
  • Print-on-Demand (POD) – কাস্টম ডিজাইন প্রোডাক্ট বিক্রি করা হয় (T-shirt, মগ, হুডি ইত্যাদি)।  এই বিজনেস মডেলটি বর্তমানে অনেক ট্রান্ডিং অবস্থায় রয়েছে,  এ বিষয়ে জানতে হলে এই আর্টিকেলটা পড়তে পারেন।। 
  • ডিজিটাল প্রোডাক্ট – ইবুক, অনলাইন কোর্স, ডিজিটাল আর্ট বিক্রি করা হয়।  আপনি যদি এই ধরনের প্রোডাক্ট বিক্রি করতে চান তাহলে আপনাকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর বেসিক নলেজ গুলো অবশ্যই রাখতে হবে এর পাশাপাশি ইউনিক মার্কেটিং ফলো করতে হবে।

৩) পেমেন্ট মেথড সেটআপ করা:

অনেক কাস্টমার যদি ওয়েবসাইটে এসে পেমেন্ট করতে না পারে, তাহলে সেলই হবে না! বাংলাদেশে সাধারণত বিকাশ, নগদ, রকেটের পেমেন্ট অপশন থাকলে ভালো হয়। সঙ্গে ক্যাশ অন ডেলিভারি রাখলে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে। আর আপনার অডিয়েন্স যদি বাংলাদেশের বাইরে হয় সেক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ডের পাশাপাশি পেপাল এর মত অপশন রেখে দিতে পারেন।  তবে বর্তমান সময়ে যেহেতু  ক্রিপ্ট কারেন্সি অনেক বেশি পরিমাণে ট্রেন্ডিং অবস্থায় রয়েছে সেক্ষেত্রে চাইলে ক্রিপ্ট কারেন্সির মাধ্যমেও পেমেন্টের অপশন রেখে দিতে পারেন। 

৪) ওয়েবসাইট নাকি মার্কেটপ্লেস?

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, নিজের ওয়েবসাইট বানাবেন নাকি মার্কেটপ্লেসে স্টোর খুলবেন? মার্কেটপ্লেস বলতে মূলত বুঝানো হচ্ছে যেখানে চাইলে আপনি ওয়েবসাইট না বানিয়েও আপনার প্রোডাক্ট সেল করতে পারবেন।  

 যদি লং-টার্ম ব্র্যান্ড বানাতে চান, তাহলে Shopify বা WooCommerce দিয়ে ওয়েবসাইট বানানো বেস্ট।
যদি ঝামেলা কম চান, তাহলে Daraz, Amazon, eBay-এর মতো মার্কেটপ্লেসে স্টোর খুলতে পারেন। এই বিষয়গুলো টোটালি আপনার ওপর ডিপেন্ড করবে। 

 আমার মতামত অনুসারে,  আপনি যদি একদম নতুন হন, তাহলে মার্কেটপ্লেস থেকে শুরু করা সহজ হবে। পরে ওয়েবসাইট বানিয়ে ব্র্যান্ড বিল্ড  করতে পারেন,  তবে এটা টোটালি আপনার উপর ডিপেন্ড করবে আমারও বলতেছি।  যদি আপনার পূর্বের কোন অভিজ্ঞতা থাকে কিভাবে এই ধরনের কাজ করতে হয় তাহলে আপনি নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করেই এই কাজগুলো দ্রুততার সাথে করতে পারেন। 

ই-কমার্সের জন্য কোন প্ল্যাটফর্ম বেস্ট?

অনেকেই শুরুতেই কনফিউজড হয়ে যায়— “আমি কি Shopify দিয়ে ওয়েবসাইট বানাবো, নাকি দারাজ, Marketplace-এ স্টোর খুলবো?” এই প্রশ্নের উত্তর পুরোপুরি নির্ভর করছে আপনি কীভাবে ব্যবসা চালাতে চান তার উপর। মূলত আমার মতামত অনুসারে আপনার যদি বিজনেস ছোট হয় এবং আপনি যদি শুধুমাত্র ডিজিটাল মার্কেটিং এ উপর ভিত্তি করে আপনার  ব্যবসা করতে চান সেক্ষেত্রে আপনি চাইলে মার্কেটপ্লেস দিয়ে শুরু করতে।  এতে করে আপনার ওয়েবসাইটের উপর অতিরিক্ত  ব্যয় বহন করতে হবে না।  আর আপনি যদি অভিজ্ঞ এবং আপনার যদি এক্সপেরিয়েন্স  থাকে সেক্ষেত্রে নিজের ওয়েবসাইট দিয়ে বেটার হবে।

প্ল্যাটফর্মসুবিধাঅসুবিধা
Shopifyসহজ সেটআপ, ভালো থিম, ফাস্ট লোডিংমাসিক ফি বেশি
WooCommerceসম্পূর্ণ কাস্টমাইজেবল, ওয়ানটাইম ইনভেস্টমেন্টটেকনিক্যাল স্কিল দরকার
Wixসহজ ইন্টারফেস, সুন্দর ডিজাইনলিমিটেড ফিচার
Darazঅনেক ট্র্যাফিক, সহজ লিস্টিংকমিশন বেশি
Facebook Marketplaceফ্রি মার্কেটিং, লোকাল কাস্টমার টার্গেট করা যায়ট্রাস্ট ইস্যু, স্ক্যাম ঝুঁকি

তবে বিষয়গুলো গভীর হয়ে বোঝার জন্য এখানে দুইটা অপশনকে ব্যাখ্যা করা হলো—

 অপশন ১: নিজের ওয়েবসাইট (Shopify / WooCommerce / Wix)

এই অপশনটা সবথেকে বেটার হবে যারা লং টার্মের জন্য ই-কমার্স বিজনেস চালাতে চান।  মূলত এই  অপশনে অনেক সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে।  তবে যদি দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করা যায় সেক্ষেত্রে দেখা যাবে যে অসুবিধার থেকে সুবিধা অনেক গুণ বেশি।  এবং এই  নিজের ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ করলে কখনই বিজনেসে পরবর্তীতে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। এই অপশনে আপনাকে নিজের ওয়েবসাইট বানিয়ে সেখানে পণ্য লিস্ট করতে হবে। 

সুবিধা:

  •  আপনার নিজের ব্র্যান্ড থাকবে, কেউ বন্ধ করতে পারবে না।
  •  কাস্টমারদের ডাটা ও ইমেইল লিস্ট আপনার থাকবে, যা ফিউচার মার্কেটিংয়ের জন্য দরকারি।
  •  Facebook, Instagram, Google-এ অ্যাডস চালিয়ে ট্র্যাফিক নিয়ে আসতে পারবেন। যার মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটের প্রমোশন হবে এবং এর পাশাপাশি বিক্রয়ও বাড়বে। 

 অসুবিধা:

  •  ওয়েবসাইট বানানো ও মেইনটেইন করা শিখতে হবে।
  •  ট্রাফিক আনার জন্য শুরুতে ভালো অ্যানালাইসিস করে মার্কেটিং করতে হবে।

 অপশন ২: মার্কেটপ্লেস (Daraz / Amazon / eBay / Facebook Marketplace)

যারা আপনাদের মধ্যে নতুন ই-কমার্স বিজনেস কিংবা ডিজিটাল মার্কেটিং এ নতুন তাদের জন্য এই পদ্ধতিটি উপযুক্ত হবে বলে আশা করি।  এই পদ্ধতিতে খুব একটা বেশি সময় কিংবা কষ্ট করতে হয় না। এখানে আপনি একটা অ্যাকাউন্ট খুলে আপনার প্রোডাক্ট লিস্ট করবেন, আর কাস্টমার অর্ডার করলেই সেটা পাঠিয়ে দেবেন।  মূলত যারা নতুন তাদের জন্য এটাই বেস্ট বলে ধরা হয়ে থাকে।

 সুবিধা:

  •  নিজের ওয়েবসাইট বানানোর ঝামেলা নেই।
  •  মার্কেটপ্লেসের ট্র্যাফিক ব্যবহার করে সহজেই সেল বাড়ানো যায়।
  •  পেমেন্ট ও ডেলিভারি সিস্টেম রেডি থাকে।

 অসুবিধা:

  •  কাস্টমার আপনার না, বরং মার্কেটপ্লেসের।
  •  অনেক মার্কেটপ্লেসে কমিশন কেটে রাখে, তাই প্রফিট কম হয়।
  • অ্যাড চালানোর প্রয়োজন হয় না। 

 কোনটা বেস্ট? [অভিজ্ঞদের থেকে] 

  • যদি একদম নতুন হন, তাহলে মার্কেটপ্লেস বেস্ট, কারণ এখানে শুরু করা সহজ।
  • যদি নিজের ব্র্যান্ড বিল্ড করতে চান, তাহলে ওয়েবসাইটের দিকেই ফোকাস করা ভালো।
  • কেউ চাইলে দুইটা একসাথে করতেও পারে— শুরুতে মার্কেটপ্লেস, পরে ওয়েবসাইট!

ই-কমার্সে কাস্টমার আনতে কী কী করা যেতে পারে?

অনেকেই ই-কমার্স বিজনেস শুরু করার পর দেখে যে ওয়েবসাইট আছে, প্রোডাক্ট আছে, কিন্তু কাস্টমার আসছে না! এই সমস্যা আসলে সবার হয় যদি কাস্টমার আনার জন্য ভালো স্ট্র্যাটেজি সেট করা না থাকে। বিশেষ করে যেগুলো সম্পন্ন নতুন ওয়েবসাইট সেগুলোর ক্ষেত্রে এই ধরনের সমস্যাগুলো অধিক পরিমাণে লক্ষ্য করা যায়। 

এখানে পাঁচটা প্রুভেন মেথড দেওয়া হলো যা ফলো করলে কাস্টমার পাওয়ার সুযোগ অনেক বেড়ে যাবে—

 ১) সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (Facebook, Instagram, TikTok)

বর্তমানে বাংলাদেশসহ পুরো দুনিয়ায় Facebook, Instagram আর TikTok-এ মানুষ সবসময় একটিভ থাকে।২০২৪ সালে একটি প্রকাশিত  জরিপ থেকে জানা যায় যে অনলাইনে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবথেকে বেশি ই-কমার্স বিজনেস ৫৭% বেশি গ্রো করতেছে।  সুতরাং, এখানেই যদি কাস্টমারদের সামনে প্রোডাক্ট নিয়ে আসতে পারেন, তাহলে সেল পাওয়ার চান্স অনেক বেড়ে যায়। 

 কীভাবে করবেন?

  1.  Facebook-এ বিজনেস পেজ খুলে প্রোডাক্ট পোস্ট করা শুরু করবেন।
  2.  Reels, Shorts বা TikTok-এর মতো ভিডিও কন্টেন্ট বানিয়ে প্রোডাক্ট প্রমোট করবেন।
  3.  ইনফ্লুয়েন্সারদের দিয়ে রিভিউ করিয়ে কাস্টমারদের ট্রাস্ট বাড়াবেন।
  4.  নিয়মিত Facebook & Instagram অ্যাডস চালিয়ে নতুন অডিয়েন্সকে টার্গেট করবেন।
  5. নিয়মিত ট্রেন্ডিং বিষয়গুলো নিয়ে নিজেদেরকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবেন।

 ২) Google & YouTube SEO অপটিমাইজেশন

অনেক মানুষ সরাসরি Google-এ গিয়ে সার্চ দেয়, “সেরা স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট” বা “বেস্ট ট্রেন্ডি ড্রেস ২০২৫”। এখন যদি আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগ Google-এ প্রথম দিকে আসে, তাহলে ফ্রি তেই অনেক কাস্টমার পেয়ে যাবেন। গুগলের পাশাপাশি youtube-এ ও এই ধরনের অনেক সার্চ করা হয়ে থাকে।  যেখান থেকে প্রোডাক্ট বিক্রি করার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি পরিমাণে থাকে।  সুতরাং এই জায়গা গুলোতে যদি আপনি ভালো একটি পজিশন তৈরি করতে পারেন সে ক্ষেত্রে আপনার প্রোডাক্ট বিক্রির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে এর পাশাপাশি ওয়েবসাইটের প্রমোশনও ভালোভাবেই হবে। 

 কীভাবে করবেন?

  1.  আপনার প্রোডাক্ট রিলেটেড ব্লগ পোস্ট লিখবেন যেখানে কাস্টমারদের প্রশ্নের উত্তর থাকবে।
  2.  YouTube-এ পণ্যের রিভিউ ও গাইডলাইন ভিডিও বানাবেন, যাতে দর্শকরা কিনতে আগ্রহী হয়।
  3.  Google My Business অ্যাকাউন্ট খুলে লোকাল কাস্টমারদের সহজে টার্গেট করতে পারবেন।

 ৩) ইমেইল মার্কেটিং & WhatsApp মার্কেটিং 

অনেকে ভাবেন, ইমেইল মার্কেটিং এখন কাজ করে না, কিন্তু রিয়েলিটি হলো বড় বড় ব্র্যান্ড এখনো ইমেইলের মাধ্যমে নিয়মিত সেল পায়। শুধুমাত্র চাই সেল পায় তা কিন্তু নয় এর পাশাপাশি নিজেদের অবস্থান দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে পারে।  আর বর্তমানে হোয়াটসঅ্যাপ চালায় না এরকম ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া এই মুশকিল।  বর্তমানে অনেক whatsapp মার্কেটিং এর টুল তৈরি হচ্ছে এবং ইতিমধ্যে হয়েছে সেগুলো ব্যবহার করেও অনেকজন নিজেদের মার্কেটিং চালিয়ে যাচ্ছে এবং অনেকেই ভালো ভালো ফল পাচ্ছে।   সুতরাং এই ফিল্ডগুলোতে যদি আপনি নিজে টিকে থাকতে পারেন তাহলে নিজের ব্যবসা খুব ভালোভাবেই আপনি এগিয়ে নিতে পারবেন। 

 কীভাবে করবেন?

  1.  ওয়েবসাইটে Newsletter Sign-up অপশন রাখবেন, যাতে আগ্রহী কাস্টমাররা সাবস্ক্রাইব করতে পারে।
  2.  কাস্টমারদের জন্য এক্সক্লুসিভ অফার বা ডিসকাউন্ট ইমেইলের মাধ্যমে পাঠাবেন।
  3.  WhatsApp & Messenger-এ বট সেটআপ করে কাস্টমারদের সাথে দ্রুত যোগাযোগ রাখবেন।
  4. Whatsapp নাম্বার কানেক্ট করার টুল ব্যবহার করবেন। 

 ৪) ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং

সাম্প্রতিক সময়ে ইনফ্লুয়েন্স এর মার্কেটিং অনেক ভালো একটি স্ট্রাটেজি হিসেবে অনেকেই ব্যবহার করতেছে।  যেহেতু বর্তমান সময়ে অনলাইনে অনেক ধরনের  ইনফ্লুয়েন্স তৈরি হচ্ছে সেক্ষেত্রে অল্প মূল্যেই একটি বিশাল  অডিয়েন্সকে জড়ানো করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিং এর সব থেকে বড় একটি সুবিধা হল একটি সিঙ্গেল ভিডিও কিংবা পোস্টের মাধ্যমে একটি বিশাল অডিয়েন্স এর কাছে আপনার পণ্যগুলো পৌঁছে যাবে।  আর যেহেতু অডিয়েন্সটা ইনফ্লুয়েন্সারদেরকে ট্রাস্ট করে সেক্ষেত্রে আপনার বিজনেসের উপর  ট্রাস্ট করতে তারা খুব একটা দ্বিধাবোধ করবে না। 

 কীভাবে করবেন?

  1.  আপনার নিশ অনুযায়ী মাইক্রো ইনফ্লুয়েন্সার খুঁজে বের করবেন, যারা কম টাকায় রিভিউ দিতে রাজি।
  2.  ইনফ্লুয়েন্সারদের দিয়ে আনবক্সিং ভিডিও, টেস্টিং ভিডিও বা লাইভ প্রোমোশন করাবেন।

 ৫) ক্যাশব্যাক & ডিসকাউন্ট অফার

মানুষ সাধারণত যেখানে কম দামে ভালো কিছু পায়, সেখান থেকেই কিনতে চায়।  আর বাঙালি জাতি হল বিশ্বের সবথেকে এই ধরনের উন্নত লোভী জাতির মধ্যে অন্যতম।  আপনি যদি একটু লোক দেখাতে পারেন সে ক্ষেত্রেই আপনার ব্যবসা দাঁড়িয়ে যাবে।  ইতিমধ্যে আমাদের বেশ কয়েকটি বিজনেসের ক্ষেত্রে এই টেকনিকটা অবলম্বন করে খুবই  ভালো একটি অবস্থান দাঁড় করাতে পেরেছি।  আপনি যদি নতুন ব্যবসা করেন সেক্ষেত্রে এই টেকনিকটা অনেক কাজে দিবে।  আর যেহেতু অল্প দাম থাকে তাই ডিসকাউন্ট বা ক্যাশব্যাক অফার দিলে সেল অনেক দ্রুত বাড়বে।

 কীভাবে করবেন?

  1.  প্রথম ১০০ জন কাস্টমারের জন্য স্পেশাল ডিসকাউন্ট দিতে পারেন।
  2.  “Buy 1 Get 1 Free” অফার দিয়ে কাস্টমারদের আকর্ষণ করবেন।
  3.  স্পেশাল ফেস্টিভ অফার বা লিমিটেড টাইম ডিল চালু করবেন। 
  4. অনলাইনে লাইভ প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণ করাবেন। 
  5.  এছাড়া বিভিন্ন ধরনের প্রমোশনও করতে পারেন। 

ই-কমার্স ব্যবসার জন্য কত ইনভেস্টমেন্ট লাগবে?

 ই-কমার্স বিজনেস করার ক্ষেত্রে ব্যবসার জন্য কত ইনভেস্টমেন্ট লাগবে অনেক ডিফিকাল্ট একটি বিষয়।  মানুষ অনলাইনে বিজনেস করতে গেলে একটা সবচেয়ে কমন একটা  থাকে যেটা হলো: “ই-কমার্স শুরু করতে কত টাকা লাগবে?” এর উত্তর আসলে নির্ভর করছে আপনি কোন মডেলে কাজ করতে চান তার উপর। নিচে তিনটা অপশন দেওয়া হলো—

 ১) একদম লো বাজেট (৫,০০০-১৫,০০০ টাকা)

যদি খুব কম ইনভেস্ট করতে চান, তাহলে Facebook Marketplace, Daraz, বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে বিনা খরচে স্টোর খুলে কাজ শুরু করা যেতে পারে।  এক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো মাথায় থাকবে রাখতে হবে। 

  1.  Facebook পেজ খুলতে একদমই টাকা লাগবে না।
  2.  অনলাইন থেকে ড্রপশিপিং বা প্রি-অর্ডার মডেলে কাজ করা যাবে, যেখানে আগে অর্ডার আসবে, তারপর পণ্য কিনবেন।
  3.  বুস্টিং করতে চাইলে ৫,০০০-১০,০০০ টাকা বাজেট রাখলে ভালো ফল পাবেন।

 ২) মিড বাজেট (২০,০০০-৫০,০০০ টাকা)

যদি নিজের ওয়েবসাইট বানিয়ে ই-কমার্স চালাতে চান, তাহলে কিছু ইনভেস্টমেন্ট লাগবে।

  1. ডোমেইন & হোস্টিং: বছরে ৫,০০০-১০,০০০ টাকা লাগতে পারে।
  2.  ওয়েবসাইট সেটআপ: Shopify বা WooCommerce দিয়ে ওয়েবসাইট বানাতে খরচ ১০,০০০-২০,০০০ টাকা পড়তে পারে।
  3.  মার্কেটিং বাজেট: Facebook & Google অ্যাডস চালাতে প্রতি মাসে কমপক্ষে ১০,০০০-৩০,০০০ টাকা বাজেট রাখা ভালো।

 ৩) হাই বাজেট (১,০০,০০০+ টাকা)

যদি বড় পরিসরে শুরু করতে চান, তাহলে অনেক ইনভেস্টমেন্ট দরকার হবে।

  1.  বড় স্কেলে ইনভেন্টরি: আগে থেকেই স্টক কিনে রাখতে হবে।
  2.  প্রফেশনাল ওয়েবসাইট: কাস্টম ডিজাইন ওয়েবসাইট বানাতে ৫০,০০০+ টাকা লাগতে পারে।
  3.  বড় মার্কেটিং ক্যাম্পেইন: Facebook, Google, YouTube, এবং Influencer মার্কেটিংয়ের জন্য ৫০,০০০+ টাকা বাজেট রাখা লাগবে।

সংক্ষেপ

  1. যদি একদম লো বাজেটে শুরু করতে চান, তাহলে Facebook Marketplace বা ড্রপশিপিং ভালো অপশন।
  2.  যদি নিজের ওয়েবসাইট বানিয়ে ব্র্যান্ড তৈরি করতে চান, তাহলে কমপক্ষে ৩০,০০০-৫০,০০০ টাকা বাজেট রাখা ভালো।
  3.  যদি বড় স্কেলে ইনভেস্ট করতে পারেন, তাহলে ১ লাখ বা তার বেশি বাজেট হলে দ্রুত গ্রো করতে পারবেন। 

উপসংহার:

ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করা পূর্বের তুলনায় এখন অনেক সহজ , কিন্তু এটাকে লাভজনক বানাতে হলে স্মার্ট প্ল্যানিং আর স্ট্র্যাটেজি দরকার। Facebook, Instagram, YouTube, Google SEO, ইমেইল মার্কেটিং—সবকিছু মিলিয়ে একটা ভালো মার্কেটিং মডেল তৈরি করলে আপনি ধীরে ধীরে ব্র্যান্ড বিল্ড করতে পারবেন। আর বাজেটের ব্যাপারে চিন্তা করলে, কম বাজেটেও শুরু করা সম্ভব, শুধু স্টেপ-বাই-স্টেপ আগাতে হবে।

মূলত, ই-কমার্স বিজনেসে সফল হতে হলে ধৈর্য ধরতে হবে, নিয়মিত মার্কেটিং আপডেট জানতে হবে, আর কাস্টমারদের চাহিদা বুঝতে হবে। আশা করি এই আর্টিকেল থেকে আপনারা ই-কমার্স বিজনেস কিভাবে শুরু করতে হয় এই বিষয়ে একটি বেসিক গাইডলাইন পেয়ে গিয়েছেন।  আপনারা যদি এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চান তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাতে পারেন তাহলে আমরা ভবিষ্যতে এই বিষয়ে আরো আরো বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব আসসালামু আলাইকুম। 

Leave a Comment