মাইক্রোসফট এক্সেল এমন একটি সফটওয়্যার যা আপনি ব্যক্তিগত বা প্রফেশনাল কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। এটি আপনার ডাটা ম্যানেজমেন্ট এবং অ্যানালাইসিসকে অনেক সহজ করে তোলে। তবে যারা এক্সেল শেখার জন্য নতুন, তাদের জন্য অনেক ফিচার একটু জটিল মনে হতে পারে। তাই এখানে আলোচনা করা হবে ১০টি সহজ টিপস, যা আপনাকে এক্সেল শেখা এবং আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করবে।

এই আর্টিকেলে আমরা এমন কিছু সহজ এবং কার্যকর টিপস নিয়ে আলোচনা করেছি, যেগুলো আপনাকে এক্সেলে দক্ষ হতে সাহায্য করবে। এই টিপসগুলো একদিকে যেমন সময় বাঁচাবে, তেমনি কাজের মানও বাড়াবে। তাই, চলুন শুরু করা যাক!
১ . এক্সেলের ইন্টারফেস ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করবেন

মাইক্রোসফট এক্সেল ওপেন করলেই আপনার সামনে একটি বড় স্ক্রিন দেখা যায়, যেখানে অনেক অপশন আর বাটন। প্রথমবার এক্সেল ওপেন করলে এগুলো দেখে একটু ঘাবড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু যদি এই ইন্টারফেসটা ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন, তাহলে এক্সেল শেখা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
উপরের অংশে আপনি দেখবেন একটা বড় বার, যেটা রিবন নামে পরিচিত। রিবনে থাকে বিভিন্ন ট্যাব, যেমন Home, Insert, Page Layout, ইত্যাদি। এই ট্যাবগুলো আবার ভাগ করা হয়েছে ছোট ছোট গ্রুপে, যেখানে বিভিন্ন কাজের জন্য আলাদা অপশন রাখা হয়েছে।
যেমন, আপনি যদি কোনো টেক্সট কপি বা পেস্ট করতে চান, তাহলে Home Tab থেকে সহজেই সেই অপশন পাবেন। আবার, যদি আপনি কোনো চার্ট বানাতে চান, তাহলে যেতে হবে Insert Tab-এ।
এরপর নিচের দিকে দেখবেন এক্সেলের ওয়ার্কশিট বা গ্রিড, যেখানে রো আর কলাম মিলিয়ে ছোট ছোট বক্স থাকে। এই বক্সগুলোকে বলে সেল। প্রতিটি সেলের একটা ঠিকানা থাকে, যেমন A1, B2। এই সেলগুলোতেই ডাটা এন্ট্রি করতে হয়।
তাহলে কিভাবে শুরু করবেন? প্রথমে একটু সময় নিয়ে ইন্টারফেসটা বুঝুন। প্রতিটি ট্যাব আর অপশন ক্লিক করে দেখুন। কী কী কাজ করতে পারেন, সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। একবার যদি আপনি এই ইন্টারফেসটা ভালোভাবে বুঝে যান, তাহলে এক্সেলে কাজ করা অনেক মজার হয়ে যাবে।
২. বেসিক ফর্মুলাগুলো শিখবেন
এক্সেলের আসল মজা হলো এর ফর্মুলা। আপনি যদি ফর্মুলা ব্যবহার করতে জানেন, তাহলে হাতের কাজ এক লাফে অনেক দ্রুত হয়ে যাবে। আর ভালো খবর হলো, এক্সেলের বেশিরভাগ ফর্মুলা খুবই সহজ এবং সরাসরি।
ধরা যাক, আপনি ১০টি সংখ্যার যোগফল বের করতে চান। এবার যদি প্রতিটি সংখ্যা হাতে হাতে যোগ করেন, সেটা তো অনেক সময় লাগবে। কিন্তু এক্সেলে আপনি সহজে SUM ফর্মুলা ব্যবহার করে কাজটা সেরে ফেলতে পারবেন।
উদাহরণস্বরূপ:
=SUM(A1:A10)
এটি ব্যবহার করলে A1 থেকে A10 পর্যন্ত যে সংখ্যাগুলো আছে, সেগুলোর যোগফল এক ক্লিকেই বের হয়ে যাবে।
আরেকটি দরকারি ফর্মুলা হলো AVERAGE। এই ফর্মুলার মাধ্যমে গড় বের করতে পারবেন। যদি B1 থেকে B5 পর্যন্ত ডাটা থাকে, তাহলে:
=AVERAGE(B1:B5)
এছাড়াও IF ফর্মুলা খুব কাজে লাগে। এটি দিয়ে কন্ডিশন চেক করতে পারবেন। যেমন, যদি কোনো সেলের মান ৫০-এর বেশি হয়, তাহলে “Pass” দেখাবে, আর না হলে “Fail”:
=IF(A1>50, “Pass”, “Fail”)
ফর্মুলাগুলো শেখার সময় প্রথমে বেসিকগুলোতে মনোযোগ দিবেন। এগুলো ঠিকমতো বুঝলে ধীরে ধীরে আরও অ্যাডভান্সড ফর্মুলার দিকে যেতে পারবেন। আর ফর্মুলা নিয়ে প্র্যাকটিস করলে কাজের গতি অনেক বেড়ে যাবে।
৩. কিবোর্ড শর্টকাট ব্যবহার করবেন

এক্সেলে কাজ করার সময় কিবোর্ড শর্টকাটগুলো শিখে রাখা খুবই দরকার। কারণ শর্টকাট জানলে কাজ অনেক দ্রুত হয়, আর মাউস ব্যবহার করার ঝামেলাও কমে যায়।
ধরা যাক, আপনি একটি সেল থেকে অন্য সেলে ডাটা কপি করতে চান। সাধারণভাবে করতে গেলে কপি অপশন ক্লিক করতে হবে, তারপর গিয়ে পেস্ট করতে হবে। কিন্তু যদি আপনি Ctrl + C এবং Ctrl + V ব্যবহার করেন, তাহলে এক মুহূর্তেই কাজ হয়ে যাবে।
আরও কিছু দরকারি শর্টকাট:
- Ctrl + Z: যদি ভুল করেন, তাহলে সহজে আনডু করতে পারবেন।
- Ctrl + S: কাজ সেভ করার জন্য এই শর্টকাটটা ব্যবহার করতে পারেন।
- Alt + =: কোনো রেঞ্জের যোগফল বের করার জন্য এটি খুবই কাজে লাগে।
- Ctrl + Arrow Keys: এক সেল থেকে আরেক সেলে দ্রুত যাওয়ার জন্য খুবই উপকারী।
আপনি যদি বড় ডাটাবেস নিয়ে কাজ করেন, যেমন ১০০০ বা ৫০০০ রো রয়েছে, তখন এই শর্টকাটগুলো সময় বাঁচানোর জন্য অসাধারণ ভূমিকা রাখে। প্রথম দিকে হয়তো একটু মনে রাখা কঠিন লাগবে, কিন্তু ধীরে ধীরে ব্যবহার করলে এগুলো আপনার অভ্যাসে পরিণত হবে।
শর্টকাট শিখে রাখলে এক্সেলের উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ বাড়বে এবং সময়ও বাঁচবে। তাই কাজের গতি বাড়ানোর জন্য শর্টকাট শেখার অভ্যাস করবেন।
৪. ডাটা ফরম্যাটিং-এর স্কিল ডেভেলপ করবেন
এক্সেলের একটি বড় সুবিধা হলো, আপনি যেকোনো ডাটাকে সুন্দর এবং প্রেজেন্টেবল করে তুলতে পারবেন। কিন্তু সেই কাজটা করতে হলে ডাটা ফরম্যাটিং সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার। ডাটা ফরম্যাটিং মানে শুধু রঙ বা ফন্ট চেঞ্জ করা নয়; বরং ডাটাকে এমনভাবে সাজানো, যাতে সেটা দেখতে সুন্দর হয় এবং বোঝা সহজ হয়।
ধরা যাক, আপনি একটি ডেটাবেস তৈরি করেছেন যেখানে বিক্রয়ের অঙ্ক, প্রোডাক্টের নাম, আর তারিখ রয়েছে। যদি এগুলো এলোমেলো থাকে, তাহলে কেউ বুঝতেই পারবে না কী আছে। কিন্তু আপনি যদি সঠিক ফরম্যাটিং করেন, যেমন:
- প্রোডাক্টের নামগুলো আলাদা রঙে দেখাবেন।
- বিক্রয়ের অঙ্কগুলোকে Currency Format-এ রাখবেন।
- তারিখগুলো Short Date Format ব্যবহার করে সাজাবেন।
তাহলে পুরো ডেটাবেস অনেক পরিষ্কার আর সুন্দর দেখাবে।
এছাড়া, আপনি বর্ডার ব্যবহার করে ডাটাকে গুছিয়ে তুলতে পারেন। ধরুন, একটি টেবিল তৈরি করেছেন; বর্ডার অ্যাড করলে সেটা আরও আকর্ষণীয় আর স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বর্ডার অ্যাড করার জন্য Home Tab-এ থাকা বর্ডার অপশন ব্যবহার করতে পারেন।
আরেকটি বিষয় হলো, ডাটা হাইলাইট করা। মনে করুন, কিছু সংখ্যার মধ্যে থেকে ১০০ এর বেশি ভ্যালুগুলো হাইলাইট করতে চান। এজন্য আপনি ডাটা ফরম্যাটিং টুল ব্যবহার করে সহজেই এই কাজটা করতে পারবেন।
ডাটা ফরম্যাটিং শুধু ডাটাকে সুন্দর করে না, বরং এটি ডাটাকে আরও কার্যকরভাবে উপস্থাপন করতে সাহায্য করে। তাই ফরম্যাটিংয়ের প্র্যাকটিস করবেন এবং এই স্কিলটি ডেভেলপ করার চেষ্টা করবেন।
৫. ফিল্টার এবং সোর্ট ফিচার ব্যবহার করবেন
বড় ডাটাবেসের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ডাটা খুঁজে বের করা কখনো কখনো অনেক কঠিন হয়ে যায়। যদি আপনি হাতে হাতে ডাটা খুঁজতে যান, তাহলে সময়ের অপচয় হবে এবং ভুল করার সম্ভাবনাও থাকবে। এক্সেলে এই সমস্যার সমাধান হলো Filter এবং Sort ফিচার।
Filter ফিচারটি আপনাকে ডাটার মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু খুঁজে বের করতে সাহায্য করে। যেমন, একটি ডেটাবেসে ১০০টি প্রোডাক্টের ডাটা রয়েছে। আপনি যদি শুধু একটি নির্দিষ্ট প্রোডাক্টের বিক্রয় ডাটা দেখতে চান, তাহলে ফিল্টার সেট করতে পারেন। এক্সেল তখন শুধু সেই প্রোডাক্টের ডাটাগুলো দেখাবে।
অন্যদিকে, Sort ফিচার ডাটাকে একটি নির্দিষ্ট অর্ডারে সাজাতে সাহায্য করে। ধরুন, একটি কলামে সংখ্যা রয়েছে। আপনি যদি সংখ্যাগুলো ছোট থেকে বড় (Ascending Order) বা বড় থেকে ছোট (Descending Order) ভাবে সাজাতে চান, তাহলে Sort অপশন ব্যবহার করতে পারেন।
ফিল্টার এবং সোর্ট ফিচার কোথায় পাবেন?
এই দুটি ফিচার আপনি Data Tab-এ পাবেন। প্রথমে ডাটার মধ্যে ক্লিক করুন, তারপর সেখান থেকে ফিল্টার বা সোর্ট অপশন সিলেক্ট করুন।
প্রতিদিনের কাজ সহজ করার জন্য এই ফিচারগুলো খুবই দরকারি। বড় ডাটাবেস নিয়ে কাজ করলে অবশ্যই এগুলো ব্যবহার করবেন। এতে আপনার সময় বাঁচবে এবং ডাটার মধ্যে কোনো কনফিউশন থাকলে সেটাও দূর হবে।
৬. চার্ট তৈরি করা শিখবেন
এক্সেলে কাজ করার সময় অনেক সময় শুধু সংখ্যা বা ডাটার উপর নির্ভর করে বিশ্লেষণ করা কঠিন হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে চার্ট একটি দারুণ সমাধান হয়ে থাকে। চার্টের মাধ্যমে আপনি ডাটাকে ভিজুয়াল আকারে উপস্থাপন করতে পারবেন, যা বোঝা সহজ এবং আকর্ষণীয়।
ধরা যাক, আপনি একটি মাসের বিক্রয় ডাটা নিয়ে কাজ করছেন। এখন যদি প্রতিদিনের বিক্রয় ফলাফলকে চার্টে দেখান, তাহলে সহজেই বোঝা যাবে কোন দিন বিক্রয় বেশি ছিল, কোন দিন কম। এই ভিজুয়াল উপস্থাপনা অনেক সময় সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
এক্সেলে আপনি বিভিন্ন ধরনের চার্ট পাবেন, যেমন:
- Pie Chart: এটি সাধারণত কোনো ডাটার অংশবিশেষ দেখানোর জন্য ব্যবহার হয়।
- Bar Chart: বিভিন্ন ডাটার তুলনা দেখাতে এটি খুবই কার্যকর।
- Line Chart: সময়ের সাথে ডাটার পরিবর্তন বোঝানোর জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।
কিভাবে চার্ট তৈরি করবেন?
প্রথমে আপনার ডাটার রেঞ্জ সিলেক্ট করুন। তারপর Insert Tab-এ যান। সেখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের চার্টের অপশন দেখতে পাবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী চার্ট সিলেক্ট করে তৈরি করতে পারবেন।
চার্ট শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, বরং ডাটাকে বোঝা সহজ করে। বিশেষ করে যদি আপনি প্রেজেন্টেশনের জন্য ডাটা তৈরি করেন, তাহলে চার্ট যোগ করলে সেটি আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। তাই এক্সেলে কাজ করার সময় চার্ট ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
৭. ডাটা ভ্যালিডেশন ব্যবহার করে ভুল ডাটা এন্ট্রি এড়াবেন
এক্সেলে কাজ করার সময় একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো সঠিক ডাটা এন্ট্রি নিশ্চিত করা। বড় ডাটাবেস নিয়ে কাজ করলে ছোটখাটো ভুল খুব সহজেই হয়ে যেতে পারে। এই সমস্যার সমাধান হলো ডাটা ভ্যালিডেশন ফিচার। এর মাধ্যমে আপনি নির্ধারণ করতে পারবেন কোন ধরনের ডাটা একটি সেলে এন্ট্রি করা যাবে এবং কোনটা যাবে না।
ধরা যাক, আপনি একটি কলামে শুধু সংখ্যা রাখতে চান, যেখানে ১ থেকে ১০০-এর মধ্যে মান থাকতে হবে। এখন যদি কেউ ভুল করে সেখানে ১০১ বা অন্য কোনো অপ্রাসঙ্গিক ডাটা এন্ট্রি করে, তাহলে সেটি এক্সেল সঙ্গে সঙ্গে ব্লক করে দেবে।
ডাটা ভ্যালিডেশন ব্যবহার করার প্রক্রিয়া:
- প্রথমে সেই সেল বা রেঞ্জ সিলেক্ট করুন যেখানে ভ্যালিডেশন দিতে চান।
- এরপর Data Tab-এ যান এবং Data Validation অপশন সিলেক্ট করুন।
- একটি নতুন উইন্ডো খুলবে, যেখানে আপনি বিভিন্ন শর্ত নির্ধারণ করতে পারবেন। যেমন, সংখ্যা, তারিখ, বা টেক্সট।
- সব সেট করার পর OK দিন, এবং ভ্যালিডেশন কার্যকর হয়ে যাবে।
এছাড়া, আপনি একটি Error Message সেট করতে পারেন, যাতে কেউ ভুল ডাটা এন্ট্রি করলে এক্সেল সেই ভুলের কারণ ব্যাখ্যা করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ সংখ্যা এন্ট্রি করার বদলে টেক্সট লেখে, তাহলে একটি মেসেজ দেখাবে: “এই কলামে শুধু সংখ্যা এন্ট্রি করতে হবে।”
ডাটা ভ্যালিডেশন আপনাকে ডাটা এনালাইসিসের সময় অপ্রয়োজনীয় ভুল থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে এবং আপনার ডাটাবেসকে আরও নির্ভুল রাখবে।
৮. কন্ডিশনাল ফরম্যাটিং ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ ডাটা হাইলাইট করবেন
এক্সেলে একটি বড় সুবিধা হলো কন্ডিশনাল ফরম্যাটিং, যা আপনাকে ডাটার নির্দিষ্ট অংশকে ভিজুয়ালভাবে হাইলাইট করতে দেয়। এটি মূলত তখনই কাজে লাগে, যখন আপনার ডাটাবেস বড় এবং কিছু নির্দিষ্ট ডাটা দ্রুত খুঁজে বের করতে চান।
উদাহরণ হিসেবে ধরুন, আপনার কাছে বিক্রয়ের একটি তালিকা রয়েছে এবং আপনি জানতে চান কোন বিক্রয়ের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকার বেশি। এখন কন্ডিশনাল ফরম্যাটিং ব্যবহার করলে এক্সেল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই সেলগুলোকে হাইলাইট করবে যেগুলোর মান ৫০ হাজারের বেশি।
কিভাবে করবেন?
- প্রথমে ডাটার রেঞ্জ সিলেক্ট করুন।
- তারপর Home Tab থেকে Conditional Formatting অপশন ক্লিক করুন।
- এখানে আপনি বিভিন্ন নিয়ম পাবেন, যেমন Highlight Cell Rules, Top/Bottom Rules, ইত্যাদি।
- আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়ম সিলেক্ট করে সেট করুন।
এছাড়া, আপনি বিভিন্ন রঙ ব্যবহার করতে পারেন, যাতে ডাটাগুলো আরও স্পষ্টভাবে দেখা যায়। যেমন, লাল রঙ ব্যবহার করে কম বিক্রয়ের ডাটা এবং সবুজ রঙ ব্যবহার করে বেশি বিক্রয়ের ডাটা আলাদা করতে পারবেন।
কন্ডিশনাল ফরম্যাটিং বড় ডাটাবেস নিয়ে কাজ করার সময় দারুণ একটি টুল। এটি ডাটাকে সহজে বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে এবং সময়ও অনেক বাঁচায়।
৯. পিভট টেবিলের মাধ্যমে ডাটা এনালাইসিস সহজ করবেন
এক্সেলের সবচেয়ে শক্তিশালী টুলগুলোর একটি হলো পিভট টেবিল। বড় ডাটাবেসের ক্ষেত্রে পিভট টেবিলের মাধ্যমে আপনি খুব দ্রুত ডাটা এনালাইসিস করতে পারবেন। এটি মূলত ডাটাকে রিয়ারেঞ্জ বা পুনরায় সাজানোর একটি পদ্ধতি, যাতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সহজে বোঝা যায়।
ধরুন, আপনার কাছে একটি বিক্রয় ডাটাবেস রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন প্রোডাক্টের নাম, তারিখ এবং বিক্রয়ের পরিমাণ রয়েছে। যদি আপনি জানতে চান কোন প্রোডাক্টটি সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে, তাহলে পিভট টেবিল কয়েক ক্লিকের মাধ্যমেই সেই তথ্য বের করে দেবে।
কিভাবে পিভট টেবিল তৈরি করবেন?
- প্রথমে আপনার ডাটার উপর ক্লিক করুন।
- এরপর Insert Tab-এ যান এবং Pivot Table অপশন সিলেক্ট করুন।
- একটি নতুন উইন্ডো আসবে, যেখানে আপনি পিভট টেবিলের জন্য রেঞ্জ এবং লোকেশন সিলেক্ট করতে পারবেন।
- OK প্রেস করার পর একটি নতুন শিট খুলবে, যেখানে আপনি ডাটা সাজাতে পারবেন।
পিভট টেবিলের একটি সুবিধা হলো, এটি ডাটা ফিল্টার করার সুযোগ দেয়। আপনি চাইলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের বিক্রয় ডাটা বা নির্দিষ্ট প্রোডাক্টের ডাটা সহজেই দেখতে পারবেন।
পিভট টেবিল ব্যবহার করলে বড় ডাটাবেস নিয়ে কাজ করাও সহজ হয়ে যায়, আর আপনার বিশ্লেষণও আরও কার্যকর হয়।
১০. এক্সেল টেমপ্লেট ব্যবহার করে সময় বাঁচাবেন
যদি আপনি এক্সেলে প্রতিদিন একই ধরনের কাজ করেন, তাহলে বারবার নতুন করে শুরু করার চেয়ে টেমপ্লেট ব্যবহার করা অনেক সহজ এবং সময় সাশ্রয়ী। এক্সেল টেমপ্লেট হলো আগে থেকেই তৈরি করা কিছু ফাইল, যা নির্দিষ্ট কাজের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে ধরুন, আপনি মাসিক বাজেট তৈরি করতে চান। এক্সেলে এমন অনেক টেমপ্লেট আছে, যেখানে আয়-ব্যয়ের হিসাব আগে থেকেই সেট করা থাকে। আপনাকে শুধু নিজের ডাটা এন্ট্রি করতে হবে।
কিভাবে টেমপ্লেট ব্যবহার করবেন?
- এক্সেল ওপেন করার পর File Tab-এ যান।
- সেখানে New অপশন ক্লিক করুন।
- এক্সেলের লাইব্রেরি থেকে বিভিন্ন টেমপ্লেট দেখতে পাবেন। যেমন, বাজেট, ইনভেন্টরি, ক্যালেন্ডার, ইত্যাদি।
- পছন্দমতো টেমপ্লেট সিলেক্ট করে কাজ শুরু করুন।
এছাড়া, আপনি চাইলে নিজেও একটি টেমপ্লেট তৈরি করতে পারেন। যেমন, যদি একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাটে রিপোর্ট বানানোর দরকার হয়, তাহলে একবার সেই ফরম্যাট তৈরি করে সেটিকে টেমপ্লেট হিসেবে সেভ করতে পারবেন। এরপর যখনই দরকার হবে, সেটি ব্যবহার করতে পারবেন।
টেমপ্লেট ব্যবহারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সময় বাঁচানো এবং একইসঙ্গে কাজের মান নিশ্চিত করা। এটি এক্সেলে কাজকে আরও সহজ এবং ঝামেলামুক্ত করে।
উপসংহার
এক্সেল শেখার যাত্রা যতটা কঠিন মনে হয়, আসলে ততটা নয়। কিছু নির্দিষ্ট টুল এবং ফিচার সম্পর্কে ধারণা থাকলে এক্সেলের অধিকাংশ কাজ সহজেই করা সম্ভব। এই আর্টিকেলে উল্লেখ করা প্রতিটি টিপ আপনাকে এক্সেলে দক্ষ হতে সাহায্য করবে, সেটা ডাটা এন্ট্রি থেকে শুরু করে পিভট টেবিল তৈরি পর্যন্ত।
তবে মনে রাখবেন, এক্সেল শেখার ক্ষেত্রে ধারাবাহিক প্র্যাকটিস খুব গুরুত্বপূর্ণ। যত বেশি কাজ করবেন, তত বেশি আত্মবিশ্বাস বাড়বে। এক সময় দেখবেন, আপনি জটিল কাজগুলোও অনায়াসে করতে পারছেন।