আউটসোর্সিং বিষয়টা এখনো অনেকের কাছে অজানা অথবা বলা যেতে পারে এই বিষয়ে জ্ঞানহীন। মূলত আউটসোর্সিং কি এবং এটা কিভাবে কাজ করে এই বিষয়টা নিয়েই আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব।

বর্তমান যুগে আউটসোর্সিং একটি শক্তিশালী ব্যবসায়িক কৌশল হয়ে উঠেছে, যার মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ এবং সেবা বিদেশী কোম্পানির কাছে দেওয়া হয়। অনেক সময়, এটা ব্যবসাগুলোর জন্য সাশ্রয়ী ও দক্ষতার সাথে কাজ করার একটি পথ। তবে, আউটসোর্সিং এর বিভিন্ন দিক এবং এর সুযোগ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকলে আপনি আরো সহজেই এর সুবিধা নিতে পারবেন।
এখানে আমরা আউটসোর্সিং এর মূল ধারণা, এর সুবিধা-অসুবিধা, এবং আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে কী ধরনের কাজ করা সম্ভব সেই বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো। এর মাধ্যমে আপনি শিখতে পারবেন কিভাবে আপনি নিজেও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কাজের সুযোগ পেতে পারেন, এবং এটা আপনার ক্যারিয়ারে কিভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাহলে শুরু করা যাক।
আউটসোর্সিং কি?

আউটসোর্সিং শব্দটি এসেছে ইংরেজি শব্দ “আউট” এবং “সোর্সিং” থেকে, যার অর্থ হলো বাইরের কোনো উৎস থেকে কোনো কাজ করিয়ে নেওয়া। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, যখন কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি তার প্রয়োজনীয় কাজ অন্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করিয়ে নেয়, তাকে আউটসোর্সিং বলে। মূলত, বিভিন্ন কাজের জন্য আলাদা আলাদা কর্মী বা অবকাঠামো গড়ে তোলার পরিবর্তে কোনো কাজ বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের দিয়ে সম্পন্ন করা হয়, যেটা প্রতিষ্ঠানের খরচ ও সময় বাঁচায়।
উদাহরণ হিসেবে, ধরুন আপনার ব্যবসার জন্য কাস্টমার সাপোর্ট, অ্যাকাউন্টিং, মার্কেটিং বা আইটি সম্পর্কিত কাজ দরকার; কিন্তু এই কাজগুলো সরাসরি প্রতিষ্ঠানের ভেতরে করানো কঠিন, ব্যয়বহুল বা অপ্রয়োজনীয়। তখন আপনি একটি আউটসোর্সিং কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তাদের কাজটি পরিচালনা করতে দিতে পারেন।
আউটসোর্সিংয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান বিশেষজ্ঞদের থেকে দক্ষ সেবা পায়, যা তাদের কাজের মান ও দক্ষতাকে উন্নত করে। বর্তমানে, ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বড় বড় কোম্পানিও অনেক সময় আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কাজ করিয়ে নিচ্ছে।
এটি শুধু খরচ সাশ্রয় করে না বরং প্রতিষ্ঠানের মূল কার্যক্রমের উপর আরও বেশি মনোযোগ দিতে সাহায্য করে। যেমন, আপনি যদি একটি ই-কমার্স ব্যবসা চালান এবং আপনার ইমেল কাস্টমার সাপোর্টের জন্য আলাদা কর্মী নিয়োগ করা ঝামেলার মনে হয়, তবে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে আপনি সহজেই এই কাজ করিয়ে নিতে পারেন।
এছাড়াও অনেক সময় আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে অন্য দেশের বিশেষজ্ঞদের সেবা নেওয়া সম্ভব, যা প্রযুক্তিগত দিক থেকে আরও উন্নত ও বৈচিত্র্যময় হতে পারে।
আউটসোর্সিং করতে হলে যে বিষয় জানতে হবে
আউটসোর্সিংয়ের জন্য কিছু বিষয়ের উপর ভালো ধারণা থাকতে হয়, যাতে কাজের গুণগত মান বজায় থাকে এবং সময়মত সম্পন্ন করা যায়। প্রথমেই নিজের কাজটি ঠিক করে নিতে হবে এবং দেখতে হবে যে সেটি আউটসোর্সিং উপযোগী কিনা।
সাধারণত আইটি, কাস্টমার সার্ভিস, ডিজাইন, মার্কেটিং, এবং ডেটা প্রসেসিং সম্পর্কিত কাজগুলো সহজেই আউটসোর্স করা যায়। তবে কোন কোনো কাজ যেমন ডাটা সিকিউরিটি বা গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কাজের ক্ষেত্রে আউটসোর্সিং একটু ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তাই কাজটি আউটসোর্স করার আগে চিন্তা করে দেখা উচিত।
এরপর, আউটসোর্সিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বা ফ্রিল্যান্সার নির্বাচন করতে হবে, যা নির্ভর করে কাজের ধরণ ও বাজেটের উপর। এসময় পরিচিত ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম যেমন Upwork, Fiverr, Freelancer বা Guru ইত্যাদিতে প্রোফাইল দেখে, রেটিং এবং রিভিউ যাচাই করা যেতে পারে। কাজ শুরুর আগে চুক্তির শর্তাবলী যেমন সময়সীমা, বাজেট, গোপনীয়তা এবং কাজের মান নির্ধারণ করে রাখা প্রয়োজন। এই বিষয়গুলো পরিষ্কার করা হলে উভয় পক্ষের জন্য কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়।
এছাড়াও আউটসোর্সিংয়ের সময় যোগাযোগের একটি ভালো ব্যবস্থা থাকা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে নিয়মিত প্রজেক্ট আপডেট এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা যায়। যেমন, স্কাইপ বা গুগল মিটের মাধ্যমে ভিডিও কনফারেন্সে কাজের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। এভাবেই সঠিক পরিকল্পনা ও কার্যকরী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আউটসোর্সিংয়ের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায়।
আউটসোর্সিংয়ে কি কি কাজ করার সুযোগ আছে? [১০ টি]

আউটসোর্সিং বর্তমানে এমন একটি বড় ক্ষেত্র, যেখানে বিভিন্ন ধরণের কাজের সুযোগ রয়েছে। এই কাজগুলো প্রায় প্রতিটি শিল্পখাতে এবং ব্যবসায়িক দায়িত্বে দেখা যায়। চলুন দেখি আউটসোর্সিং-এর মাধ্যমে কি কি কাজ করা সম্ভব, যেগুলো বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়:
1. কনটেন্ট রাইটিং ও কপিরাইটিং
কনটেন্ট রাইটিং বর্তমানে আউটসোর্সিংয়ের অন্যতম জনপ্রিয় ক্ষেত্র। এখানে ব্লগ পোস্ট, আর্টিকেল, প্রোডাক্ট ডিসক্রিপশন, ওয়েবসাইট কন্টেন্ট, এবং সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট লেখার কাজ রয়েছে। ক্লায়েন্টরা তাদের ওয়েবসাইট বা ব্যবসা সংক্রান্ত কন্টেন্ট তৈরি করার জন্য ফ্রিল্যান্স কনটেন্ট রাইটারদের নিয়োগ করে থাকে। কনটেন্ট রাইটিংয়ে এই ক্ষেত্রে সৃজনশীলতা ও ভাষার দক্ষতা থাকা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
2. গ্রাফিক ডিজাইন
এটি এমন একটি কাজ, যা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে খুব জনপ্রিয় হয়েছে। গ্রাফিক ডিজাইনাররা ব্র্যান্ডিং, লোগো ডিজাইন, ওয়েবসাইট গ্রাফিক্স, ইনফোগ্রাফিক্স, এবং সোশ্যাল মিডিয়া গ্রাফিক্স তৈরি করেন। ডিজাইন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা ব্যবসা বা প্রোডাক্টের পরিচিতি বাড়াতে সহায়ক পদ্ধতি হয়ে থাকে।
3. ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট
ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টে বিভিন্ন ধরণের কাজ থাকে, যেমন ওয়েবসাইট তৈরি করা, ল্যান্ডিং পেজ ডিজাইন, ফ্রন্ট-এন্ড বা ব্যাক-এন্ড ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, এবং ইকমার্স ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট। এই কাজগুলো আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে অনেক ব্যবসা বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সার থেকে করিয়ে নেয়।
4. সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট
বিভিন্ন কোম্পানি এবং ব্র্যান্ড তাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো যেমন ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টুইটার ইত্যাদি ম্যানেজ করার জন্য ফ্রিল্যান্স সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারদের নিয়োগ দেয়। এদের কাজ হলো পোস্ট তৈরি, কন্টেন্ট শেয়ার, প্রোফাইল আপডেট, এবং অডিয়েন্সের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করা।
5. ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট
ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, যেখানে বিভিন্ন ছোট ও বড় প্রতিষ্ঠান তাদের দৈনন্দিন কাজের জন্য ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়োগ করে। এই কাজের মধ্যে ইমেইল ম্যানেজমেন্ট, ক্যালেন্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট, ডেটা এন্ট্রি, কল রিসিপশন এবং বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ অন্তর্ভুক্ত থাকে।
6. ট্রান্সলেশন (অনুবাদ)
বিশ্বব্যাপী বাজারে বিভিন্ন ভাষায় কন্টেন্টের চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের কন্টেন্ট বা ডকুমেন্টস বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করতে ফ্রিল্যান্স অনুবাদকদের নিয়োগ দেয়। ভাষাগত দক্ষতা ও সঠিক অনুবাদ দেওয়ার ক্ষমতা এ ধরনের কাজের জন্য প্রয়োজনীয়।
7. ডেটা এন্ট্রি
ডেটা এন্ট্রি কাজগুলোর মধ্যে অডিও বা হ্যান্ডরাইটেন ডকুমেন্টস টাইপ করা, স্ক্যান করা ডকুমেন্টসের ডেটা সিস্টেমে এন্ট্রি করা, এবং বিভিন্ন টেবিল বা এক্সেল শীটে ডেটা সংরক্ষণ করা অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই কাজগুলো নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ও সঠিকভাবে করা প্রয়োজন হয়।
8. সেলস এবং মার্কেটিং
আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সেলস এবং মার্কেটিং সম্পর্কিত কাজগুলোও করা যায়। এতে প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের জন্য কাস্টমার সাপোর্ট দেওয়া, মার্কেট রিসার্চ করা, গ্রাহক সংগ্রহের জন্য কল সেন্টার পরিচালনা, ইমেইল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চালানো ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকে।
9. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো একটি জনপ্রিয় উপায় যেখানে একজন ব্যক্তি বিভিন্ন প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের এডভারটাইটিং প্রচারের মাধ্যমে কমিশন উপার্জন করেন। এই কাজটি খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আউটসোর্সিং প্ল্যাটফর্মে, কারণ এখানে কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির প্রোডাক্ট বা সেবা প্রচার করার জন্য বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হয়।
10. ভিডিও এডিটিং
ভিডিও এডিটিং বর্তমানে এক নতুন ধরনের আউটসোর্সিং কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফ্রিল্যান্স ভিডিও এডিটররা ইউটিউব ভিডিও, প্রোডাক্ট ডেমো, টিউটোরিয়াল ভিডিও, এবং সোশ্যাল মিডিয়া ভিডিও তৈরি ও সম্পাদনা করেন। এ ধরনের কাজের জন্য বিশেষ সফটওয়্যার যেমন Adobe Premiere Pro, Final Cut Pro, এবং After Effects ব্যবহৃত হয়।
এই সব কাজগুলো আউটসোর্সিং প্ল্যাটফর্মে ক্রমাগত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কোম্পানিরা তাদের বাজেট এবং সময়সীমার মধ্যে এই কাজগুলো ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে করিয়ে নেয়, যাতে তারা আরও দক্ষতা ও সাশ্রয়ী মূল্যে কাজ করতে পারে। তাই, আউটসোর্সিং একটি বিস্তৃত ক্ষেত্র, যেখানে বেশ কয়েকটি কাজের সুযোগ পাওয়া যায়।
আউটসোর্সিং এর সুবিধা ও অসুবিধা
আউটসোর্সিংয়ের বিভিন্ন সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। সুবিধা হিসেবে উল্লেখযোগ্য হলো খরচ সাশ্রয় এবং কাজের গুণগত মান বজায় রাখা। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কর্মী নিয়োগ না করে দক্ষ ফ্রিল্যান্সার বা আউটসোর্সিং কোম্পানির মাধ্যমে কাজ করানো সম্ভব হয়, যা খরচ বাঁচায়। এছাড়া বিভিন্ন দেশে আউটসোর্সিং করলে সস্তায় কাজ পাওয়া যায়, যেমন অনেক প্রতিষ্ঠান ভারত বা বাংলাদেশ থেকে আইটি সেবা আউটসোর্সিং করে খরচ সাশ্রয় করে।
আরেকটি সুবিধা হলো দক্ষতার মান। সাধারণত, আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান বা ফ্রিল্যান্সাররা নিজেদের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হয়, তাই কাজের মানও অনেক ভালো হয়। এর ফলে, সেবা আরও উন্নত ও দ্রুত হয়, এবং প্রতিষ্ঠানটি তাদের মূল কাজের উপর ফোকাস করতে পারে।
তবে, আউটসোর্সিং এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। যেমন, কাজটি নির্ভরযোগ্যতার উপর নির্ভর করে। অনেক সময় কাজের মান ঠিক থাকে না বা ডেলিভারি সময়সীমা মানা হয় না। এছাড়া, কাজটি করতে গিয়ে তথ্যের গোপনীয়তা হুমকির মুখে পড়তে পারে, কারণ প্রতিষ্ঠানটি বাইরের সংস্থার কাছে তথ্য সরবরাহ করছে।
আউটসোর্সিং কাজের জন্য কিছু ফ্রিল্যান্সিং সাইট
আউটসোর্সিং কাজ খোঁজার জন্য বর্তমানে বেশ কিছু জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং সাইট রয়েছে, যা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দক্ষ ফ্রিল্যান্সারদের সঙ্গে সহজেই সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে। এই সাইটগুলোতে নানান ধরনের কাজের জন্য স্পেশালিস্ট ফ্রিল্যান্সার পাওয়া যায়, যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় ও বাজেটে প্রজেক্ট সম্পন্ন করা সম্ভব। এখানে কয়েকটি শীর্ষ ফ্রিল্যান্সিং সাইট সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১। Upwork

Upwork হলো ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিংয়ের সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্মগুলোর একটি, যেখানে টেকনিক্যাল কাজ , গ্রাফিক ডিজাইন, মার্কেটিং, এবং আরো অনেক ধরণের প্রফেশনাল সার্ভিস পাওয়া যায়। এটি একটি বিডিং সিস্টেমে কাজ করে, যেখানে ক্লায়েন্টরা নিজেদের কাজের টাইটেল ও ডিসক্রিপশন দিয়ে প্রজেক্ট পোস্ট করে এবং ফ্রিল্যান্সাররা সেই প্রজেক্টের জন্য বিড করে। এর মাধ্যমে, একজন ক্লায়েন্ট সহজেই নিজের বাজেট ও প্রয়োজন অনুযায়ী দক্ষ ফ্রিল্যান্সার নির্বাচন করতে পারেন। Upwork-এর একটি বড় সুবিধা হলো, এখানে নিরাপদ পেমেন্ট ব্যবস্থা রয়েছে যা উভয় পক্ষের জন্য নির্ভরযোগ্য।
২। Fiverr
Fiverr হলো আরেকটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম, যেখানে সাধারণত ছোট ও নির্দিষ্ট প্রজেক্টের কাজ পাওয়া যায়। এই সাইটে ফ্রিল্যান্সাররা নিজেদের সেবা “Gig” হিসেবে পোস্ট করে, যেখানে প্রতিটি Gig-এর জন্য নির্দিষ্ট মূল্য নির্ধারণ করা থাকে, সাধারণত ৫ ডলার থেকে শুরু করে কাজের জটিলতা অনুযায়ী তা বাড়তে থাকে। Fiverr-এ দ্রুত কাজ করানোর জন্য এটি একটি চমৎকার সাইট, বিশেষ করে ছোট প্রজেক্টের ক্ষেত্রে এটি বেশ উপযোগী।
৩। Freelancer.com

Freelancer.com একটি বিডিং প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ফ্রিল্যান্সার এবং ক্লায়েন্টরা বিভিন্ন প্রজেক্টের জন্য বিড করে। ক্লায়েন্টরা এখানে তাদের প্রজেক্ট পোস্ট করতে পারেন এবং ফ্রিল্যান্সাররা সেই প্রজেক্টে কাজের জন্য আবেদন করেন। এই সাইটের সুবিধা হলো, এখানে নানান ধরনের কাজের প্রজেক্ট পাওয়া যায়, যেমন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, কনটেন্ট রাইটিং, ডেটা এন্ট্রি এবং আরো অনেক।
৪। Guru
Guru হলো এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে সহজেই প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সার পাওয়া যায়। Guru-এর মাধ্যমে আউটসোর্সিং কাজের ক্ষেত্রে বড় প্রজেক্ট পরিচালনা সহজ হয়। এটির একটি বড় সুবিধা হলো, এখানে প্রজেক্ট বেসড বা ঘণ্টা ভিত্তিতে কাজ করানো যায়, ফলে বাজেটের ভিত্তিতে সঠিক ফ্রিল্যান্সার নির্বাচন করা সহজ হয়।
এছাড়াও Toptal, PeoplePerHour এবং SimplyHired এর মত ফ্রিল্যান্সিং সাইটে বিশেষজ্ঞ ফ্রিল্যান্সার পাওয়া যায়, যারা বিভিন্ন ধরনের কাজ যেমন আইটি সেবা, আর্থিক সেবা, এবং ডিজাইন সেবা প্রদান করে। এই সাইটগুলো আউটসোর্সিংয়ে ব্যবহৃত হয় এবং ক্লায়েন্টদের সাথে ফ্রিল্যান্সারদের সহজ সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে।
ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং এর মধ্যে পার্থক্য কি?

ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং শব্দ দুটি পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত হলেও এদের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। সহজভাবে বলতে গেলে, ফ্রিল্যান্সিং হলো একটি ব্যক্তিগত কাজের ক্ষেত্র, যেখানে একজন ব্যক্তি স্বাধীনভাবে বিভিন্ন ক্লায়েন্টের জন্য কাজ করেন।
অন্যদিকে, আউটসোর্সিং হলো একটি প্রতিষ্ঠান অন্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তার নির্দিষ্ট কাজগুলো করিয়ে নেওয়া। ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানা গেলে এর কার্যকারিতা এবং প্রয়োজনীয়তা সহজে বোঝা যায়।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে একজন ব্যক্তি বা ফ্রিল্যান্সার সরাসরি ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করেন, যেখানে ক্লায়েন্টরা তাকে একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য নিয়োগ করে। এখানে কাজের ধরন যেমন: কনটেন্ট রাইটিং, গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, এবং কাস্টমার সাপোর্ট প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত থাকে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মূল সুবিধা হলো এটি সময়ের দিক থেকে স্বাধীনতা দেয়, যেখানে ফ্রিল্যান্সার তার নিজের সময় ও ইচ্ছামতো কাজ করতে পারেন।
আউটসোর্সিং একটু বড় পরিসরে ব্যবহৃত হয়। একটি প্রতিষ্ঠান যখন নিজস্ব লোকবল বা সংস্থান না থাকা বা সময় বাঁচাতে বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছে কাজ করিয়ে নেয়, তখন তাকে আউটসোর্সিং বলা হয়। যেমন, অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের আইটি সেবা, অ্যাকাউন্টিং, কাস্টমার সাপোর্ট প্রভৃতি কাজ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করিয়ে থাকে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো কম খরচে উচ্চমানের সেবা পেতে পারে।
মূল পার্থক্যটি হলো, ফ্রিল্যান্সিং ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র কাজে ব্যবহৃত হয়, যেখানে ফ্রিল্যান্সার নিজে কাজ করে থাকেন, এবং আউটসোর্সিং হয় পুরো প্রতিষ্ঠান বা প্রকল্প ভিত্তিক কাজে ব্যবহৃত। ফ্রিল্যান্সিং অনেকটা আউটসোর্সিংয়ের একটি অংশ বলা যায়, যেখানে একটি কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান ফ্রিল্যান্সারের মাধ্যমে তাদের কাজ করিয়ে থাকে।
আউটসোর্সিং কাজের চাহিদা কেমন?
বর্তমানে আউটসোর্সিং কাজের চাহিদা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে এখন প্রতিটি দেশেই আউটসোর্সিং কাজের পরিধি বাড়ছে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলো তাদের কাজ কম খরচে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আউটসোর্স করে খরচ সাশ্রয় করছে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশ, ভারত, ফিলিপাইন, এবং পাকিস্তানের মত দেশগুলোতে বিভিন্ন প্রকার আইটি, গ্রাহক সেবা, এবং অন্যান্য কাজ আউটসোর্সিং করে থাকে।
আউটসোর্সিং কাজের চাহিদা বাড়ার পিছনে কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, প্রতিষ্ঠানগুলো আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে তাদের খরচ কমিয়ে আনে। কারণ, একটি কাজ নিজের দেশে করালে উচ্চ মজুরি দিতে হয়; কিন্তু বিদেশি কর্মীদের মাধ্যমে সেই কাজটি করলে কম খরচে কাজ করানো যায়। দ্বিতীয়ত, সময় সাশ্রয় ও দক্ষতা বৃদ্ধি আউটসোর্সিংয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা।
বর্তমানে ই-কমার্স, ডিজিটাল মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট, ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, এবং কাস্টমার সাপোর্টের মত কাজগুলোতে আউটসোর্সিংয়ের চাহিদা বেশি। পাশাপাশি ডাটা এন্ট্রি, ডাটা প্রসেসিং এবং অ্যানালাইসিসের মত কাজগুলোতে আউটসোর্সিং অনেক জনপ্রিয়। ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও বড় বড় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলিও অনেক সময় আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে তাদের কাজ করায়।
উন্নত প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট সুবিধার কারণে এই কাজের পরিধি ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।
উপসংহার
সার্বিকভাবে বলা যায়, আউটসোর্সিং হলো এমন একটি শক্তিশালী টেকনিক, যা ব্যবসা বা ব্যক্তিগত কাজের ক্ষেত্রে দক্ষতা, সাশ্রয় এবং সময় সাশ্রয়ের মাধ্যমে অনেক সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। তবে, আউটসোর্সিংয়ের সফলতা নির্ভর করে সঠিক কাজ নির্বাচন এবং দক্ষ ফ্রিল্যান্সার বা সার্ভিস প্রোভাইডারের উপর।
মূলত, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আপনি গ্রাফিক ডিজাইন, কনটেন্ট রাইটিং, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট, ডেটা এন্ট্রি, এবং আরও অনেক কাজ করতে পারেন। আমাদের অন্যান্য আর্টিকেলও পড়তে পারেন, যেখানে আমরা আরো বিস্তারিতভাবে এই বিষয়ে আলোচনা করেছি।