প্রিন্ট অন ডিমান্ড কি? কিভাবে প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেস শুরু করা যায়?

ভাবছেন, অনলাইনে ব্যবসা শুরু করবেন, কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবেন সেটা নিয়ে কনফিউজড? আসলে, আজকের সময়ের এক সেরা অপশন হলো প্রিন্ট অন ডিমান্ড (POD)। এখন প্রশ্ন হলো প্রিন্ট অন ডিমান্ড কি? এবং কিভাবে প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেস শুরু করা যায়? এই মডেলটা বর্তমানে অনেক সহজ এবং ঝামেলাহীন। এখানে আপনার কোনো স্টক ম্যানেজ করতে হবে না, বা আগেভাগে প্রোডাক্ট বানিয়ে রাখতে হবে না। আপনি শুধু ডিজাইন তৈরি করবেন, আর সেটা শার্ট, মগ, বা অন্য কোনো প্রোডাক্টে প্রিন্ট হয়ে কাস্টমারের কাছে পৌঁছে যাবে।

print on demand

শুনতে বেশ ইন্টারেস্টিং, তাই না? POD-এর সবচেয়ে ভালো দিক হলো, এটা কম খরচে শুরু করা যায়। যারা নিজের ক্রিয়েটিভিটিকে ব্যবসায় রূপ দিতে চান, তাদের জন্য এটা পারফেক্ট। তবে POD শুরু করতে গেলে অনেক ছোটখাটো বিষয় জানা দরকার—কীভাবে শুরু করবেন, কোন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করবেন, আর কাস্টমারদের কীভাবে আকর্ষণ করবেন। এই আর্টিকেলে এসব বিষয় নিয়েই একেবারে সহজভাবে আলোচনা করা হবে। তাহলে চলুন এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। 

প্রিন্ট অন ডিমান্ড কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে?

প্রিন্ট অন ডিমান্ড, বা সংক্ষেপে POD, এমন এক ধরনের বিজনেস মডেল যেখানে আপনার নিজের স্টকে কিছু রাখার দরকার হয় না। একেবারে সহজভাবে বললে, যখন কেউ আপনার ডিজাইন করা প্রোডাক্ট অর্ডার করে, তখন সেই প্রোডাক্ট তৈরি করা হয় এবং সরাসরি কাস্টমারের কাছে পাঠানো হয়। এর মানে এই ধরনের বিজনেস মডেলে, আপনাকে প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং বা ডেলিভারির চিন্তা করতে হয় না বরং অর্ডারের উপর নির্ভর করে।

ধরুন, আপনি কাস্টম ডিজাইন করা টিশার্ট বিক্রি করতে চান। এখন যদি আপনি নিজের ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট সেট করতে যান, তাহলে স্টক, মেশিন, এবং অনেক ইনভেস্টমেন্ট লাগবে। কিন্তু POD-এর মাধ্যমে, আপনি শুধু ডিজাইন করবেন। Printful বা Printify-এর মতো POD প্রোভাইডার আপনার প্রোডাক্ট তৈরি করবে এবং সেই কাস্টমারের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেবে। আপনি শুধু একটা অর্ডার পেলেই সেটার  বিক্রির ফলে প্রোফিট তুলতে পারবেন।

POD বিজনেস মূলত তাদের জন্য পারফেক্ট, যারা নিজের ক্রিয়েটিভিটি দিয়ে কিছু করতে চান কিন্তু বড় কোনো ইনভেস্টমেন্টে যেতে চান না। আর ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, আপনার প্রোডাক্টের জন্য কোনো মজুত রাখতে হচ্ছে না, তাই ঝুঁকিও কম।

প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেস শুরু করতে কী কী লাগে?

মূলত এই বিজনেস শুরু করার জন্য খুব বেশি ঝামেলা নেই। তবে কয়েকটা বেসিক জিনিস আপনার লাগবে:

  1. ডিজাইন স্কিল: আপনাকে ক্রিয়েটিভ হতে হবে। টিশার্ট, মগ বা অন্য প্রোডাক্টের ডিজাইন কাস্টমাইজড হতে হবে। তবে আপনাদের মধ্যে যারা সম্পূর্ণ নতুন তাদেরকে বলতে চাই, বর্তমানে Canva বা Adobe Photoshop দিয়ে সহজেই ডিজাইন করা যায়।
  2. অনলাইন স্টোর: আপনাকে এমন একটা প্ল্যাটফর্মে স্টোর খুলতে হবে, যেখানে কাস্টমাররা সহজে ঢুকে প্রোডাক্ট অর্ডার করতে পারে। Shopify, Etsy, Amazon-এ POD বিজনেস খুব জনপ্রিয়। অবশ্য এক্ষেত্রে আপনি নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করে প্রিন্ট অন ডিমান্ড সার্ভিস প্রোভাইড করতে পারেন।  
  3. POD প্রোভাইডার: Printful, Printify, বা Teespring-এর মতো প্রোভাইডার আপনাকে প্রোডাক্ট তৈরি এবং শিপিংয়ে সাহায্য করবে। এরা অনেকটা “বিজনেস পার্টনার”-এর মতো কাজ করে।
  4. মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি: সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ফেসবুক অ্যাডস, বা ইনস্টাগ্রাম রিলসের মাধ্যমে আপনার প্রোডাক্ট প্রোমোট করতে হবে।  এছাড়াও বিভিন্ন মাধ্যমে বিভিন্ন টেকনিক অবলম্বন করে মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি সাজানো যেতে পারে। 
  5. পেমেন্ট সিস্টেম: পেমেন্ট ম্যানেজ করতে আপনাকে PayPal বা Stripe সেটআপ করতে হবে। এগুলো ইন্টারন্যাশনাল কাস্টমারদের জন্যও সুবিধাজনক। তবে যদি বাংলাদেশকে টার্গেট করে বিজনেস করতে চান তাহলে বিকাশ,  নগদ, রকেট ইত্যাদি পেমেন্ট সিস্টেম যুক্ত করে দিতে পারেন যাতে বাংলাদেশী কাস্টমারদের সুবিধা হয়। 

শুরুতে হয়তো নতুন কিছু শিখতে একটু সময় লাগবে। তবে একবার যদি প্রসেসটা ভালোভাবে বুঝে ফেলেন, সবকিছু একেবারে স্মুথ হয়ে যাবে। আর বিষয়গুলো যত বড় এবং গভীরে যাবেন তত নতুন নতুন কিছু যুক্ত করতে হতে পারে কিংবা নতুন কিছু এড করা যেতে পারে এবং নিজের পছন্দমত সেখানে পরিবর্তন করতে পারেন। 

POD প্রোভাইডার বেছে নেওয়ার সময় কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে?

POD প্রোভাইডার নির্বাচন করার সময় কয়েকটা বিষয় ভালোভাবে দেখা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমান সময়ে। কারণ এই প্রোভাইডারই আপনার জন্য প্রোডাক্ট তৈরি করবে এবং ডেলিভারি দেবে। আমাদের রিসার্চ  মতে  কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখলেই হবে।   নিচে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট  গুলো সম্পর্কে একটু সংক্ষেপে লেখা হল:

  1. প্রোডাক্ট ভেরাইটি: প্রথমেই দেখবেন, প্রোভাইডার কত ধরনের প্রোডাক্ট অফার করে। কেউ যদি শুধু টিশার্ট নিয়ে কাজ করে, তাহলে সেটা আপনার বিজনেসের জন্য লিমিটেড হয়ে যাবে। আর কোন প্রোভাইডার যদি টি-শার্ট এর পাশাপাশি প্যান্ট কিংবা  হুডি এই ধরনের প্রোডাক্ট অফার করে সেক্ষেত্রে আপনার ইনকামের অপরচুনিটি বৃদ্ধি পাবে। 
  2. কোয়ালিটি এবং রিভিউ: এই বিজনেসে প্রিন্ট কোয়ালিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খারাপ প্রোডাক্ট দিলে কাস্টমাররা নেগেটিভ রিভিউ দেবে, যা আপনার ব্র্যান্ডের এবং আপনার ফিউচার সিলিং এ ক্ষতি করতে পারে।
  3. ডেলিভারি টাইম: প্রোভাইডারদের ডেলিভারি টাইম ভালোভাবে চেক করবেন। দ্রুত ডেলিভারি হলে কাস্টমার সন্তুষ্ট থাকার পসিবিলিটি বৃদ্ধি পাবে।  আর দ্রুত ডেলিভারি করা সম্ভব হলে প্রোডাক্ট  কেনার প্রতি কাস্টমারের আগ্রহী হবে। 
  4. ইন্টিগ্রেশন সাপোর্ট: Shopify, Etsy-এর মতো প্ল্যাটফর্মের সাথে সহজে ইন্টিগ্রেট করা যায় এমন প্রোভাইডার বেছে নিবেন। 
  5. সার্ভিস চার্জ: খরচ কেমন হচ্ছে সেটা হিসাব করা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এখান থেকেই আপনার প্রোফিট মার্জিন ঠিক হবে। যে প্রতিষ্ঠানে তুলনামূলক সার্ভিস চার্জ কম দিবে কিন্তু কোয়ালিটি এবং অন্যান্য সুবিধা বেশি দিবে তাদেরকে বেছে নেয়ার চেষ্টা করবেন।  শুধুমাত্র  সার্ভিস চার্জ কে টার্গেট করে আবার  প্রোভাইডার খুঁজতে যাবেন না কেননা অনেক সময় দেখা যায় সার্ভিস চার্জ কম আবার কোয়ালিটি  তুলনামূলক খারাপ আবার কখনো কখনো দেখা যায় সার্ভিস চার্জ বেশি কিন্তু কোয়ালিটি এবং সবদিক তুলনামূলক ভালো।  

আপনার যদি কোনো প্রোভাইডার সম্পর্কে কনফিউশন থাকে, তাহলে তাদের ফ্রি ট্রায়াল ব্যবহার করে একটা টেস্ট অর্ডার দিবেন। এতে সার্ভিস কেমন সেটা বুঝতে সহজ হবে। আর আপনাদের যদি পরিচিত থাকে তাদের কাছ থেকেও সহযোগিতা কিংবা রিকমেন্ডেশন নেয়ার চেষ্টা করবেন। 

POD বিজনেসে সফল হওয়ার জন্য কীভাবে মার্কেটিং করা উচিত?

POD বিজনেসে সফল হতে চাইলে সঠিক মার্কেটিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যত ভালো ডিজাইনই করুন, যদি সেগুলো কাস্টমারের কাছে পৌঁছাতে না পারে, তাহলে কোনো লাভ নেই এই বিজনেস মডেলে। এখানে মার্কেটিং মানে শুধু অ্যাডস চালানো নয়; আপনার ব্র্যান্ডের উপস্থিতি তৈরি করাই মূল উদ্দেশ্য।  নিচে সবথেকে জনপ্রিয় মার্কেটিং স্ট্রাটেজি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলোঃ

১। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং:

ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, পিনটারেস্ট—এসব প্ল্যাটফর্ম আপনার POD বিজনেসের জন্য সোনার খনি বলা যেতে পারে। আপনার প্রোডাক্টগুলোর জন্য আকর্ষণীয় পোস্ট তৈরি করা সব থেকেই গুরুত্বপূর্ণ এজন্য মনোযোগ দিয়ে আকর্ষণীয় পোস্ট করার দিকে  মনোযোগী হবে। উদাহরণ স্বরূপ, টিশার্টের কাস্টম ডিজাইনগুলো ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করতে পারেন। সেখানে কাস্টম হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করবেন, যেন আরও বেশি মানুষ দেখতে পায়।

২। ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম অ্যাডস:

আপনার টার্গেট অডিয়েন্স কে, সেটা বুঝে ফেসবুক অ্যাডস সেট করতে হবে। ধরুন, আপনি কফি লাভারদের জন্য ফানি কোটস দেওয়া মগ তৈরি করছেন। তাহলে টার্গেট করবেন এমন মানুষকে যারা কফি নিয়ে পোস্ট শেয়ার করে বা “coffee lover” ইন্টারেস্ট অপশনে পড়ে।

৩। ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং:

আজকাল ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতেছে। প্রাথমিকভাবে ন্যানো বা মাইক্রো ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে কাজ করতে পারেন, আর আপনার যদি মার্কেটিং করার ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণে অর্থ ব্যয় করতে চান সেক্ষেত্রে বড় বড় ইন্সুরেন্সারদের সাথে কথা বলতে পারেন। এক্ষেত্রে  মাইক্রো ইনফ্লুয়েন্স এর ফলোয়ার সংখ্যা কম হলেও, এক্টিভ অডিয়েন্স থাকে, যারা রিয়েল কাস্টমার হতে পারে।

সব মিলিয়ে, মোট এনসার হল আপনার মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি হতে হবে স্মার্ট। যেখানেই অডিয়েন্স, সেখানেই আপনার ব্র্যান্ড  এইরকম একটি মানসিকতা রাখতে হবে। তাহলে আপনি সঠিকভাবে আপনার প্রোডাক্টকে মার্কেটিং করতে পারবেন।

POD বিজনেসে ডিজাইন আইডিয়া কোথা থেকে পাওয়া যায়?

ডিজাইন আইডিয়া পাওয়া অনেকের কাছে বড় একটা চ্যালেঞ্জ মনে হয় আবার অনেকের কাছেই এই বিষয়টা খুবই সহজ মনে হয়। তবে আপনাদের মধ্যে যারা এইটি কি অনেক চ্যালেঞ্জিং মনে করেন তারা চিন্তা করবেন না! আজকাল অসংখ্য সোর্স আছে, যেখানে থেকে আপনি ইনস্পিরেশন নিতে পারেন।

১। Pinterest এবং Instagram:

Pinterest হচ্ছে বর্তমান দুনিয়ার ডিজাইন আইডিয়ার এক বিশাল ভান্ডার। এখানে নির্দিষ্ট কীওয়ার্ড সার্চ করলে হাজারো নতুন নতুন ডিজাইন দেখতে পাবেন। উদাহরণ স্বরূপ, “funny t-shirt quotes” লিখে সার্চ করুন, দেখবেন অসংখ্য ট্রেন্ডিং ডিজাইন। ইনস্টাগ্রাম  এর ক্ষেত্রে ও একই। হ্যাশট্যাগ দিয়ে সার্চ করুন, যেমন #customtshirts। তাহলে অসংখ্য আইডিয়া পেয়ে যাবেন। 

২। Amazon এবং Etsy:

আইডিয়া নেওয়ার ক্ষেত্রে Amazon এবং Etsy-তে বেস্টসেলার লিস্ট চেক করতে পারেন। এখানে দেখে বুঝতে পারবেন, বর্তমানে কোন ধরনের প্রোডাক্ট বা ডিজাইন বেশি বিক্রি হচ্ছে।  এবং সেভাবে আপনি আপনার ডিজাইন ক্লিয়ার করতে পারবেন। 

৩। মুভি, মিউজিক, আর কালচার:

অনেক সময় জনপ্রিয় মুভি, গান বা মিম থেকে অনেক ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং ইন্টারেস্টিং আইডিয়া আসতে পারে। ধরে নেন, আপনার অডিয়েন্স যদি প্রেজেন্ট টাইমের ইয়াং জেনারেশন হয়, তাহলে তাদের পছন্দের মুভি বা গানের রেফারেন্স দিয়ে মজার ডিজাইন বানাতে পারেন।

৪। AI টুলস ব্যবহার করুন:

বর্তমান সময়ে সবথেকে যে বিষয়টি বেশি ট্রেন্ডিং সেটি হল এআই। বর্তমান সময়ে কিছু জনপ্রিয় AI টুল, যেমন Gemini বা ChatGPT, আপনাকে নতুন আইডিয়া সাজেস্ট করতে পারে। এই টুলগুলো ব্যবহার করে আপনি নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টম ডিজাইন তৈরি করতে পারবেন।

অন্যের ডিজাইন কপি না করে, এগুলো থেকে ইনস্পিরেশন নিয়ে আপনার মতো করে ইউনিক কিছু তৈরি করবেন। এতে আপনার ব্র্যান্ডের আলাদা পরিচিতি তৈরি করতে সুবিধা হবে। 

POD বিজনেসের জন্য কী ধরনের প্রোডাক্ট সবচেয়ে জনপ্রিয়?

POD বিজনেসে প্রোডাক্ট নির্বাচন করাটা  খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা সব প্রোডাক্ট সমানভাবে চলে না। কিছু নির্দিষ্ট প্রোডাক্ট আছে, যেগুলোর চাহিদা সবসময় বেশি থাকে। আবার কিছু প্রোডাক্ট আছে যেগুলো লিমিটেড অর্থাৎ সিজনাল। তবে পি ও ডি বিজনেস এর ক্ষেত্রে সবথেকে জনপ্রিয় কয়েকটি পণ্য হলঃ 

১। টিশার্ট:

টিশার্ট হলো POD বিজনেসের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোডাক্ট। কারণ টিশার্ট এমন একটা জিনিস, যেটা সবাই ব্যবহার করে। ইউনিক ডিজাইন আর ট্রেন্ডি কোটস দেওয়া টিশার্টের চাহিদা কখনও শেষ হয় না। আর কোন নির্দিষ্ট ইভেন্টকে কেন্দ্র করে টি-শার্ট বানালে সেগুলোর বিক্রির সংখ্যা আরো বৃদ্ধি  করা যায়।

২। হুডি এবং সোয়েটশার্ট:

শীতকালে হুডি আর সোয়েটশার্টের চাহিদা অনেক বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। আপনার ডিজাইন যদি ইউনিক হয়, তাহলে এই সিজনাল প্রোডাক্ট থেকে ভালো প্রফিট করা সম্ভব। বিশেষ করে এই ধরনের প্রোডাক্টগুলোতে প্রফিট মার্জিন তুলনামূলক বেশি থাকে। 

৩। মগ:

“World’s Best Dad” বা “Coffee Addict”-এর মতো মজার কোটস দেওয়া মগ সব সময় হিট। কাস্টম মগের চাহিদা বিয়ে, জন্মদিন বা উৎসবের সময় বেশি থাকে।  বিশেষ করে নির্দিষ্ট কোন ইভেন্ট কিংবা নির্দিষ্ট কোন দিনকে কেন্দ্র করে এই ধরনের মগ  এর চাহিদা  বৃদ্ধি পায়। 

৪। ফোন কেস:

বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে জেনারেশন Z বা মিলেনিয়ালদের কাছে কাস্টম ফোন কেস খুব জনপ্রিয়  হয়ে উঠতেছে। যদি আপনি ইউনিক আর কালারফুল ডিজাইন বানাতে পারেন, তাহলে এই মার্কেট ধরতে পারবেন।  আর এই মার্কেটে ভবিষ্যতে  ডিমান্ড আরো বেশি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

৫। পোস্টার এবং কুশন কভার:

যারা ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন পছন্দ করে, তারা কাস্টমাইজড পোস্টার বা কুশন কভারে অনেক বেশি পরিমাণে আগ্রহী হয়ে থাকে। মজার কোটস বা মোটিভেশনাল মেসেজ দিয়ে ডিজাইন করলে কাস্টমারদের আকর্ষণ করা যায়। এছাড়াও বর্তমানে বিভিন্ন ন্যাচারাল এবং ইন্টারেস্টিং চিহ্ন পছন্দের ছবিকে মানুষ পোস্টার হিসেবে অনেক বেশি পরিমাণে ইউজ করতেছে।  যার ফলে ভবিষ্যতে এর চাহিদা আরো বৃদ্ধি পাইতে পারে। 

৬। ব্যাগ এবং টোট ব্যাগ:

পলিউশন নিয়ে সচেতনতার কারণে এখন অনেকেই টোট ব্যাগ বা রিইউজেবল ব্যাগ কিনছে। এগুলোতে কাস্টম ডিজাইন দিয়ে আপনি ভালো মার্কেট ধরতে পারেন।  যেহেতু বর্তমান সময়ে মানুষ  ইনভারমেন্ট কে টার্গেট করে অনেক  পরিবেশবান্ধব প্রোডাক্ট কিন্তু আগ্রহী হচ্ছে সেক্ষেত্রে এটি অনেক দুর্দান্ত পারফর্ম করতে পারে। 

POD বিজনেস শুরু করতে কত খরচ হয়?

অনেকে ভাবেন, POD বিজনেস শুরু করতে হয়তো বিশাল ইনভেস্টমেন্ট এর দরকার  হয়। কিন্তু মজার বিষয় হলো, এই ব্যবসা খুবই লো ইনভেস্টমেন্টে শুরু করা যায়। আসুন, একটু খরচের হিসাব দেখি।

১। প্ল্যাটফর্ম সাবস্ক্রিপশন খরচ:

আপনি যদি Shopify বা Etsy-তে স্টোর খুলতে চান, তাহলে মাসিক সাবস্ক্রিপশন ফি লাগবে। Shopify-এর ক্ষেত্রে মাসে $29 থেকে শুরু হয়। আর Etsy-তে প্রতিটি লিস্টিংয়ের জন্য $0.20 লাগে। আরো সব থেকে ভালো হয় যদি আপনি নিজের ওয়েবসাইট এ কাজ করতে পারেন সে ক্ষেত্রে আপনার খরচ খুবই কমে যাবে। 

২। ডিজাইন টুল:

ডিজাইন বানানোর জন্য ফ্রি টুল যেমন Canva ব্যবহার করতে পারেন। তবে প্রিমিয়াম ফিচারের জন্য Canva Pro বা Photoshop-এর মতো পেইড টুল ব্যবহার করলে খরচ বাড়বে। Photoshop-এর মাসিক সাবস্ক্রিপশন প্রায় $20। এক্ষেত্রে বর্তমানে Canva Pro বিভিন্ন সাবস্ক্রিপশন প্ল্যান অনেক সময় ফ্রিতে পাওয়া যায় যেগুলো ইউজ করেও কাজ করতে পারেন।  এছাড়া বর্তমানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর কারণে এই ধরনের টুল গুলো খুব একটা প্রয়োজন হচ্ছে না ফ্রিতে অনেক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট থেকেই কালারফুল এবং আকর্ষণীয় ডিজাইন করে নেয়া সম্ভব হচ্ছে। 

৩। মার্কেটিং খরচ:

ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম অ্যাডস চালাতে প্রথমে $50-$100 বাজেট রাখুন। ছোট করে শুরু করলে এই বাজেট যথেষ্ট। আর আপনি যদি অন্যান্যতে অ্যাডভার্টাইজিং করতে চান সেক্ষেত্রে আরও বেশ খরচ করতে পারে।  তবে আপনি চাইলে সম্পূর্ণ ফ্রিতেও মার্কেটিং করতে পারেন যদি আপনার এ ধরনের স্টাটেজি জানা থাকে। 

৪। প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং খরচ:

POD-এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, আগে থেকে কোনো ইনভেন্টরি রাখতে হয় না। শুধুমাত্র অর্ডার আসলে প্রোডাক্ট তৈরি হয়। ধরুন, Printful বা Printify-এর মতো POD প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছেন। তারা প্রতি প্রোডাক্ট তৈরি আর শিপিংয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কাটবে। এক্ষেত্রে আপনি যদি নিজে ম্যানুফ্যাকচারিং করতে চান সেক্ষেত্রে এটা আপনার উপর মোটেই ডিপেন্ড করবে যে আপনার ম্যানুফ্যাকচারিং কস্ট কত হবে। 

৫। ডোমেইন এবং হোস্টিং:

আপনার নিজস্ব ওয়েবসাইট বানাতে চাইলে বছরে $10-$15 ডোমেইন এবং $50-$100 হোস্টিং খরচ হবে। তবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অফার থাকে যার কারণে অনেক সময় এ থেকে কম মূল্যেও আপনি ডোমেইন এবং হোস্টিং নিতে পারবেন। 

মোটামুটি খরচের ধারণা:

প্রাথমিক খরচ $100-$200-এর মধ্যে হলে আপনি সহজেই শুরু করতে পারবেন। তবে খরচ কমানোর জন্য ফ্রি অপশনগুলোর ব্যবহার বাড়াতে পারেন।  আপনি চাইলে সম্পূর্ণ ফ্রিতেও শুরু করতে পারেন কিন্তু সে ক্ষেত্রে আপনাকে বেশি কষ্ট করতে হবে এবং নানা ধরনের টেকনিক অবলম্বন করতে হবে। 

POD বিজনেসে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী এবং কীভাবে সমাধান করা যায়?

POD বিজনেস অনেক সহজ মনে হলেও মোটেও তা  সহজ নয়,  এর মধ্যে কিছু বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে এগুলো জানলে এবং আগে থেকে প্রস্তুতি নিলে সহজেই সমাধান করা যায়। চলেন এরকম কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং এর সমাধান নিয়ে আলোচনা করা যাক। 

ট্রাফিক জেনারেট করা:

অনেক সময় দেখা যায়, স্টোরে ট্রাফিক আসছে না। মূলত সঠিক মার্কেটিং না করলে এই সমস্যা হয়। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাডস আর ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠা সম্ভব।  এছাড়াও নিত্য নতুন টেকনিক অবলম্বন করে মার্কেটিং করলে ট্রাফিক  জেনারেট করা সম্ভব হয়। 

প্রতিযোগিতা:

POD মার্কেট খুবই প্রতিযোগিতামূলক। হাজার হাজার স্টোর একই প্রোডাক্ট বিক্রি করছে। এ ক্ষেত্রে ইউনিক ডিজাইন তৈরি করা আর টার্গেটেড অডিয়েন্সের জন্য কাজ করাটা জরুরি। যত বেশি প্রোডাক্ট ইউনিক হবে তত বেশি পরিমাণে প্রতিযোগিতাকে পাস কাটানো সম্ভব হবে এবং দ্রুত ব্যবসাকে বড় করা সম্ভব হবে। 

ডেলিভারি সময়:

অনেক সময় প্রোডাক্ট ডেলিভারি দেরি হয়। এই সমস্যা সমাধানে ভালো POD প্ল্যাটফর্ম বেছে নিন। উদাহরণ স্বরূপ, Printful বা Printify-এর মতো বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করলে ডেলিভারি সময় কমে। আর আপনি যদি নিজে প্রোডাক্ট ম্যানুফাকচারিং করে ডেলিভারি করতে চান সেক্ষেত্রে ভালো ডেলিভারি  মাধ্যমে সাথে সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করবেন।  তারা যথা সময়ে  প্রডাক্ট ডেলিভারি দিতে পারদর্শী।

মার্জিন কম:

অনেক নতুন উদ্যোক্তা খেয়াল করেন যে, প্রোডাক্ট বিক্রি হলেও লাভ কম। এটি সাধারণত ম্যানুফ্যাকচারিং খরচ আর শিপিং ফি বেশি হলে হয়। এক্ষেত্রে সঠিক মূল্যে প্রোডাক্ট প্রাইসিং করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রাইস ইন নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে আপনার কম্পিটিটার বা প্রতিযোগীদের কাছ থেকে আইডিয়া নিতে পারেন। 

কাস্টমার রিটার্ন:

যদি প্রোডাক্টে কোনো ত্রুটি থাকে কিংবা  আপনি যে প্রোডাক্ট দেয়ার কথা সেটা দিতে না পারলে, তাহলে কাস্টমার রিটার্ন করতে পারে। তাই প্রোডাক্ট তৈরি করার সময় এবং ডেলিভারি করার সময় কোয়ালিটির দিকে বেশি মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা করবেন।  কেননা এই মার্কেটে টিকে থাকতে গেলে এই দুইটি বিষয়ে কোনো বিকল্প চলবে না। 

উপসংহার

শেষমেশ এটা বলা যায় যে, আধুনিক মার্কেটে প্রিন্ট অন ডিমান্ড একেবারেই স্মার্ট একটা ব্যবসার মডেল। কম ইনভেস্টমেন্ট, কম ঝুঁকি, আর ফ্লেক্সিবল ওয়ার্কিং সিস্টেম—সব মিলিয়ে এটা শুরু করার জন্য সেরা একটা অপশন। আপনি যদি সঠিক প্ল্যাটফর্ম বেছে নেন, ভালো ডিজাইন তৈরি করতে পারেন, আর সঠিক কৌশলে মার্কেটিং করেন, তাহলে এই ব্যবসায় সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

আর সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, POD শুধু টাকা ইনকামের একটা উপায় না, বরং এটা আপনার ক্রিয়েটিভিটিকে এক্সপ্রেস করার একটা দারুণ মাধ্যম। আপনি যেসব আইডিয়া মাথায় ঘুরছে, সেগুলোকে প্রোডাক্টে রূপ দিয়ে সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন।

Leave a Comment