আধুনিক এ সময়ে ছাত্রজীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু আয় করার কথা ভাবা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। একদিকে নিজের পার্সোনাল খরচ চালানো, অন্যদিকে এই কম্পিটিটিভ বাজারে অভিজ্ঞতা অর্জন করা—এই দুই কারণেই অনেক ছাত্রছাত্রীরা নতুন কিছু চেষ্টা করতে চায়। এখনকার দিনে মোবাইল, কম্পিউটার আর ইন্টারনেটের সহজতাই সবাইকে এমন কিছু সুযোগ দিচ্ছে, যা আগে কল্পনাও করা যেত না।

ভাবুন তো, আপনার ক্লাস শেষে ফ্রি সময়টাকে কাজে লাগিয়ে নিজের আগ্রহ অনুযায়ী কাজ করে যদি কিছু টাকা উপার্জন করা যায়, তাহলে কেমন হবে? এটা শুধু টাকার ব্যাপার না, নিজের স্কিল ডেভেলপ করার একটা ভালো সুযোগও।
তাহলে চলুন আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ছাত্র অবস্থায় অনলাইন থেকে ইনকাম করার সেরা দশটি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই। যা হয়তো এখন হয়তোবা আপনার ভবিষ্যতে কাজে আসতে পারে, আর আর্টিকেল শেষের কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন।
ছাত্র অবস্থায় অনলাইন থেকে ইনকাম করা সেরা 10 টি উপায়

বর্তমানে এই যুগে অনলাইনে টাকা আয় করার জন্য অনেক মাধ্যম তৈরি হয়েছে, এবং হচ্ছে। যারা পড়াশোনার পাশাপাশি ফাঁকা সময়ে কিছু ইনকাম করতে চান, তাদের জন্য নিচে সেরা ১০টি সহজ এবং কার্যকর উপায় তুলে ধরা হলো।
১. ফ্রিল্যান্সিং
একটু ভাবুন তো, পড়াশোনা করছেন আর হাতে কিছু সময় ফাঁকা থাকছে। এখন এই ফাঁকা সময়ে যদি একটু কাজ করে ছাত্র অবস্থায় থেকে কিছু টাকা আয় করা যায়, তাহলে তাতে মন্দ কি? ফ্রিল্যান্সিং ঠিক এমনই একটা অপশন। এখানে আপনাকে অফিসে যাওয়ার কোনো চাপ নেই, নির্দিষ্ট টাইমে হাজিরা দিতে হবে না—আপনি আপনার সময় অনুযায়ী কাজ করতে পারবেন।
মূলত, ফ্রিল্যান্সিং মানে হলো নিজের স্কিল বা যোগ্যতা ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করা এবং কাজের উপর ভিত্তি করে ইনকাম করা। ধরে নেন, আপনি গ্রাফিক ডিজাইন, কন্টেন্ট রাইটিং, ডেটা এন্ট্রি, বা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ভিডিও এডিটিং জানেন—তাহলে Fiverr, Upwork, Freelancer-এর মতো সাইটগুলোতে প্রোফাইল খুলে আপনার পছন্দমত কাজ খুঁজতে পারবেন। মূলত ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম গুলোতে অনেক ধরনের কাজ পাওয়া যায়, তাই নিজের পছন্দ অনুযায়ী শুরু করতে পারবেন। আপনার যেই কাজ শুধুমাত্র পছন্দ হবে সেই কাজ করতে পারবেন এখানে কোন কাজ করার প্রতি নির্দিষ্ট বাধ্যবাধকথা নেই।
অনেকেই ভাবেন, স্কিল তো নেই, কাজ পাবো কীভাবে? চিন্তা করবেন না। বর্তমান সময়ে YouTube বা বিভিন্ন অনলাইন কোর্স থেকে একেবারে বিনা খরচে বা সামান্য খরচে শিখে নিতে পারবেন। প্রথম দিকে হয়তো একটু কম আয় হবে, কিন্তু একবার অভিজ্ঞতা বাড়লে আপনার ইনকামও অনেক বেড়ে যাবে। সবচেয়ে ভালো দিক হলো, একবার কাজ শিখে ফেলে শুরু করলে ভবিষ্যতে এটিই আপনার ফুল-টাইম ক্যারিয়ার হয়ে উঠতে পারে।
২. ব্লগিং
ব্লগিং শুনলেই মনে হতে পারে, এটা বুঝি খুব কঠিন কিছু, কিন্তু আসলে না। ব্লগিং হলো এমন একটা মাধ্যম যেখানে আপনি নিজের মনের কথা, অভিজ্ঞতা বা যেকোনো বিষয়ে লিখে অন্যদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। মনে করুন, আপনি ট্রাভেল করতে ভালোবাসেন—আপনার ট্রাভেলের সেই গল্পগুলো লিখে ব্লগে পোস্ট করবেন। এছাড়াও আপনার যে বিষয়গুলো লিখতে মন চায় কিন্তু বাস্তবতা লিখতে পারেন না সেগুলো অনলাইনে লিখে পাবলিশ করতে পারেন। এভাবে আপনি নিজের শখের মধ্য দিয়েই আয় করতে পারবেন।
ব্লগিং থেকে আয় করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো Google Ad;*Sense এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। আপনার ব্লগে ভিজিটর আসলে অ্যাডস দেখানো হবে, আর সেখান থেকেই ইনকাম হবে। আর এফিলিয়েট মার্কেটিং এ আপনি প্রোডাক্ট প্রমোশন করে বিষয়ের মাধ্যমে আয় করতে পারবেন। আর এই বিষয়ে আমরা একটি বিস্তারিত আর্টিকেল ইতি মধ্যে লিখেছি যে আপনি করে নিতে পারেন। এ ছাড়াও, আপনি স্পনসরড কন্টেন্ট ব্যবহার করে আয় করতে পারেন।
প্রথম দিকে হয়তো ভিজিটর পেতে একটু সময় লাগবে, কিন্তু ধৈর্য ধরে রেগুলার ইউনিক এবং মানসম্মত কন্টেন্ট দিলে আপনি ভালো ফল পাবেন, এছাড়াও আপনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম গুলোতে আপনার লেখাগুলোকে শেয়ার করে রীতিমতো ভালো একটি পজিশন তৈরি করতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে WordPress বা Blogger-এর মতো প্ল্যাটফর্মে একদম ফ্রি ব্লগ খুলে প্রস্তুতি শুরু করতে পারবেন। আর যখন দেখবেন আপনি ভালো কিছু করতে পারছেন তারপর প্রয়োজনে টাকা ব্যয় করে আরো ভালোভাবে কাজ করতে পারবেন। আর সবচেয়ে ভালো দিক হলো, ব্লগিং আপনাকে শুধু ইনকাম নয়, নিজের লেখা বা চিন্তা প্রকাশ করার একটা মাধ্যমও দেবে। আর বর্তমানে ব্লগিং শেখা খুবই সহজ কেননা ইউটিউবে অনেক ধরনের ভিডিও পাওয়া যায়। যা দেখে আপনি খুব সহজেই ব্লগিং শুরু করতে পারবেন।
৩. ইউটিউব চ্যানেল
আজকাল আমরা সবাই কমবেশি ইউটিউব দেখি। কেউ কুকিং ভিডিও দেখছি, কেউ পড়াশোনার টিপস, আবার কেউবা ভ্লগ। কিন্তু ভেবেছেন কি, আপনি নিজেও একজন ইউটিউবার হতে পারেন? নিজের পছন্দের এবং আগ্রহের বিষয় নিয়ে ভিডিও বানিয়ে আপনি শুধু শখ পূরণ এর পাশাপাশি, ইনকামও করতে পারবেন।

যেমন ধরুন, আপনি ভালো রান্না জানেন। তাহলে রান্নার রেসিপি নিয়ে ভিডিও বানিয়ে আপলোড করবেন। রান্নার রিলেটেড বিভিন্ন ধরনের আইডিয়া এবং প্রশ্ন-উত্তর সলভ করার চেষ্টা করবেন তাহলে দ্রুত পপুলার হতে পারবেন। আর যদি পড়াশোনায় ভালো হন, তবে পড়ার টিপস নিয়ে ভিডিও বানান। এমনকি, গেমিং, ট্র্যাভেলিং, বা ফানি কনটেন্ট বানিয়েও অনেক ইউটিউবার এখন খুব ভালো ইনকাম করছেন। আর আপনি যদি কোনটাতেই ভালো না হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে বর্তমানে যেগুলো পপুলার বিষয়ে সেগুলো নিয়েও ভিডিও বানাতে পারেন যা বর্তমানে ভালো অবস্থানের রয়েছে।
ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য প্রথমে আপনার ভিডিওগুলো মনিটাইজেশন করতে হবে। এর মানে হলো, ভিডিওতে অ্যাডস দেখানো হবে, আর সেখান থেকে আপনি রেভিনিউ পাবেন। এ ছাড়াও, ব্র্যান্ড স্পনসরশিপ, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বা নিজের প্রোডাক্ট প্রমোট করেও ইনকাম করতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে আপনার youtube চ্যানেলকে দাঁড়াতে পারলে পরবর্তীতে আপনি বিভিন্নভাবে ইনকাম করতে পারবেন প্রয়োজনে আপনি চাইলে নিজের পণ্য বিক্রি করতে পারবেন।
শুরুতে হয়তো ভিডিও বানাতে একটু অস্বস্তি লাগবে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি সহজ হয়ে যাবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আপনার ভিডিও ইউনিক এবং ইন্টারেস্টিং হতে হবে। ব্যাস, নিয়মিত ভিডিও পোস্ট করুন, ভিউয়ার্স বাড়ান, আর ইনকামের পথ খুলে যাবে।
৪. কন্টেন্ট রাইটিং
আপনার যদি লিখতে ভালো লাগে, তাহলে কন্টেন্ট রাইটিং হতে পারে আপনার জন্য পারফেক্ট একটি অপশন। এটা এমন এক ধরনের কাজ যেখানে আপনাকে বিভিন্ন বিষয়ে আর্টিকেল, ব্লগ, প্রোডাক্ট ডিসক্রিপশন বা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট লিখতে হবে। ভাবছেন, এটা কি খুব কঠিন? একদম না!
যেমন মনে করুন, আপনি অনলাইন মার্কেটে একটি কাজ পেলেন যেখানে আপনাকে একটি কোম্পানির প্রোডাক্ট সম্পর্কে লেখার কাজ দেওয়া হল। অথবা কোনো কোম্পানি তাদের প্রোডাক্ট নিয়ে একটি আর্টিকেল লিখতে চায়। তারা আপনাকে সেই দায়িত্ব দিলে, আপনি সেটা লিখে দিবেন এবং বিনিময়ে পেমেন্ট পাবেন। আর যাদের ইংরেজি লেখা ভালো, তারা আন্তর্জাতিক মার্কেটেও কাজ করতে পারবেন। আর যারা ইংরেজি পারেন না তারা হয়তো তুলনামূলক কম ইনকাম করতে পারবেন তবে বাংলা আর্টিকেল বর্তমানে ইনকাম করা সম্ভব। বাংলা আর্টিকেল লেখার কাজ পাওয়ার জন্য আপনি বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ গ্রুপে আপনার সম্পর্কে লিখতে পারেন এবং আপনি কোন বিষয়ে ভালো লিখতে পারেন সেগুলো জানাতে পারেন তাহলে দেখবেন অনেকেই আপনাকে কাজ দিবে। তবে হয়তো প্রথম দিকে একটু কাজ কম পাবেন কিন্তু ধীরে ধীরে পরিচিতি বাড়ার সাথে সাথে ভালো অবস্থান তৈরি করতে পারবেন।
আর ইংরেজির ক্ষেত্রে Fiverr, Upwork, বা ContentMart-এর মতো সাইটে অনেক কাজ পাওয়া যায়। প্রথম দিকে হয়তো একটু কম পেমেন্টের কাজ করতে হতে পারে, কিন্তু একবার ক্লায়েন্টদের আস্থা পেলে আয়ও বাড়বে। আর কন্টেন্ট রাইটিংয়ের আরেকটি বড় সুবিধা হলো, আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, শুধু মোবাইল বা ল্যাপটপ থাকলেই এই কাজ করা সম্ভব।
কনটেন্ট রাইটিং শিখতে হলে YouTube আমার মতে সবথেকে ভালো এবং কার্যকর মাধ্যম যেখানে আপনি চাইলে ফ্রিতেই কনটেন্ট রাইটিং শিখতে পারবেন। আর আরেকটি টিপস হলো, অন্যদের লেখা পড়ে দেখুন এবং তাদের লেখা থেকে নিয়মিত শিখবেন তারপর ধীরে ধীরে নিজের লেখার স্কিল ধীরে ধীরে উন্নত করার চেষ্টা করবেন। কন্টেন্ট রাইটিং শুধু আয়ের জন্যই নয়, নিজের ভাবনা প্রকাশের এক অসাধারণ উপায়ও।
৫. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং মানে হলো, অন্য কোনো কোম্পানির প্রোডাক্ট বা সার্ভিস প্রমোট করে সেখান থেকে প্রতিটি বিক্রয় পরিবর্তে আয় করা। কোথায় আপনাকে একটি অ্যাফিলিয়ে প্রোগ্রামে যোগ দিতে হবে তারপর এখানে আপনি একটি অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক পাবেন, আর কেউ যদি সেই লিঙ্ক ব্যবহার করে কেউ কিছু কিনে, তাহলে আপনি এই বিক্রয়ের পরিবর্তে কমিশন পাবেন।
এই কাজ শুরু করতে হলে প্রথমে আপনাকে একটি ভালো প্ল্যাটফর্ম বেছে নিতে হবে। Amazon, ClickBank, Daraz, বা Bangladeshi Affiliate Platform-এর মতো জায়গা থেকে অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে যোগ দিতে পারেন। তবে আপনি যদি ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হন এবং ইংরেজিতে লেখালেখি করতে পারেন তাহলে international website গুলোতে কাজ করতে পারেন। আর আপনি যদি ইন্টারন্যাশনাল অর্থাৎ ইংরেজি না পারেন তাহলে বাংলা দেশের ভালো প্লাটফর্মগুলো থেকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন। তারপর আপনার নিজের ব্লগ, ইউটিউব চ্যানেল, বা সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল ব্যবহার করে প্রোডাক্ট প্রমোট করে ইনকাম করবেন।
যেমন ধরুন, আপনি একটা ব্লগ পরিচালনা করেন যেখানে আপনি মোবাইল রিভিউ লিখে অডিয়েন্সদেরকে আগ্রহিত করেন। এখন আপনি চাইলে আপনার ব্লগে আপনি যেই মোবাইল রিভিউ করবেন, সেই মোবাইল রিভিউ এর পাশাপাশি সেখানে মোবাইল কেনার জন্য আপনি অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক যোগ করে দিতে পারেন। কেউ সেই লিঙ্ক থেকে কিনলে আপনার কমিশন আসবে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মজার বিষয় হলো, একবার যদি লিঙ্ক দিয়ে দেন, তাহলে সেটি থেকে অনেক দিন পর্যন্ত আয় হতে থাকে, অর্থাৎ প্যাসিভ ইনকাম। তবে এটি নিয়ে কাজ করার জন্য একটু বেশি পরিমাণ ধৈর্য দরকার, কারণ শুরুতে আয় কম হতে পারে, কিংবা বলা যেতে পারে ইনকাম না হতে পারে। কিন্তু একবার ট্রাস্টেড অডিয়েন্স তৈরি হলে ইনকামের পথ খুলে যাবে। আর এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত আর্টিকেল লিখেছি আপনি চাইলে নিচে থেকে আর্টিকেলটি পড়ে নিতে পারেন।
৬. অনলাইন টিউটরিং
আপনার যদি পড়াশোনার কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয় ভালো লাগে কিংবা আপনি কোন একটি বিষয় সম্পর্কে ভালো জানেন তাহলে সে বিষয়ে আপনি অন্যদেরকে পড়িয়ে ভালো একটি ইনকাম করতে পারবেন। ধরুন, গণিত, ইংরেজি, বা ফিজিক্সে আপনি ভালো—তাহলে এই বিষয়গুলো অন্যদের শেখানোর মাধ্যমে টাকা আয় করা সম্ভব।
অনলাইন টিউটরিং হলো এমন একটি মাধ্যম যেখানে আপনি ছাত্রদের পড়াবেন, আর তারা অনলাইনের মাধ্যমে আপনার কাছ থেকে শেখার সুযোগ পাবে। আর বর্তমানে অনেক ধরনের টিউটরিং এপ্লিকেশন এবং মাধ্যম সৃষ্টি হচ্ছে যেগুলোতেও আপনি যুক্ত হতে পারেন। এখানে সবচেয়ে ভালো দিক হলো, আপনি আপনার পছন্দমত স্থান থেকে পড়াতে চান সেখান থেকেই পড়াতে পারবেন। Zoom, Google Meet-এর মতো টুল ব্যবহার করে আপনি অনলাইনে ক্লাস নিতে পারবেন।
অনেক প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যেখানে আপনি টিউটর হিসেবে সাইন আপ করতে পারেন। যেমন, Wyzant, Preply, বা Chegg Tutors। আর যদি প্ল্যাটফর্মে না যেতে চান, তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। এমনকি, ছোট গ্রুপে ক্লাস নিয়েও আয় করা সম্ভব।
অনলাইন টিউটরিং শুধু টাকার জন্য নয়, বরং এটি শেখানোর মাধ্যমে নিজের জ্ঞান আরো গভীর করার সুযোগ দেয়। আর যারা পূর্বে টিউশনি কিংবা প্রাইভেট রিলেটেড নিয়ে কাজ করেছেন তাদের জন্য এই বিষয়গুলো আরো সহজ হয়। ছাত্রদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে আপনি নিজেও অনেক কিছু শিখতে পারবেন। আর এখানে এই ধরনের কার্যকলাপের পাশাপাশি ইনকাম করার বিষয়টি তো থেকেই যায়।
৭. ই-কমার্স বা এফ-কমার্স
বর্তমানে ই-কমার্স বা এফ-কমার্স অনেক পপুলার হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে যারা ছাত্র, তাদের জন্য এটি একটি অসাধারণ সুযোগ করে দিচ্ছে। আপনি যদি চান তাহলে নিজের প্রোডাক্ট বা অন্যের প্রোডাক্ট বিক্রি করে সহজেই অনলাইন থেকে ইনকাম করতে পারবেন।
এক্ষেত্রে ই-কমার্স বলতে বুঝায় বড় বড় প্ল্যাটফর্ম, যেমন Daraz, রকমারি, বা Amazon-এর মাধ্যমে প্রোডাক্ট সেল করা। অর্থাৎ আপনি যদি নিজের কোন প্রোডাক্ট তৈরি করে থাকেন কিংবা কারো প্রোডাক্ট অনলাইনে সেল করতে চান বড় বড় প্ল্যাটফর্ম গুলোতে তখন তা ই-কমার্সে পরিণত হবে। আর এফ-কমার্স বলতে বোঝায় ফেসবুক ব্যবহার করে ব্যবসা করা। ধরুন, আপনি পার্সোনাল কোন প্রডাক্ট কিংবা হ্যান্ডমেড কোনো প্রোডাক্ট তৈরি করেন, তারপর সেগুলোকে প্রক্রিয়াজাত করে সেল করতে চান। প্রক্রিয়াজাতকরণ শেষ হলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বিক্রি করতে পারবেন। আর এটি মূলত এফ কমার্স।
আপনার যদি নিজের প্রোডাক্ট না থাকে, তবুও সমস্যা নেই। আপনি ড্রপশিপিং করতে পারেন। ড্রপ শিপিং কি এবং কিভাবে করতে হয় এ বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যে একটি আর্টিকেল লিখেছি আপনি নিতে পারেন। ড্রপ শিপিং এ আপনি গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্ডার নিবেন, আর সরাসরি সাপ্লায়ারের কাছ থেকে তাদের কাছে পাঠিয়ে দিবেন। এতে স্টক নিয়ে ঝামেলা নেই অর্থাৎ রিস্ক ফ্রি বিজনেস মডেল।
শুরুর জন্য অনেক বড় বাজেটের দরকার হয় না। ফেসবুকে পেজ খুলে, প্রোডাক্টের সুন্দর ছবি তুলে পোস্ট করলেই চলবে। তবে কাস্টমারের সাথে ভালো যোগাযোগ এবং সঠিক সময়ে ডেলিভারি নিশ্চিত করতে হবে। আর আপনার প্রোডাক্ট এর কোয়ালিটি যত ভালো হবে বিক্রয় এবং বিজনেস ততো ভালো হবে।
ই-কমার্স বা এফ-কমার্সের মজার বিষয় হলো, এটি শুধু ইনকামের পথ দেখাবে তা কিন্তু নয়, বরং এর পাশাপাশি আপনার একটি ব্যবসায়িক মনোভাব তৈরি করবে। আপনি কিভাবে কাস্টমার হ্যান্ডেল করবেন, কিভাবে মার্কেটিং করবেন—এই সব কিছু শিখে নিতে পারবেন।
৮. ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট
ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট (VA) হওয়া মানে হলো, কোনো কোম্পানি বা ব্যক্তিকে ভার্চুয়ালি অর্থাৎ অনলাইনে বিভিন্ন কাজের জন্য সাহায্য করা। এই কাজগুলো খুব কঠিন নয়, আবার খুব যে সহজ তাও কিন্তু নয়। ধরুন, ইমেইল ম্যানেজ করা, ক্যালেন্ডার সেট করা, বা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট হ্যান্ডেল করা—এসবই ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজের মধ্যে পড়ে। তবে বর্তমানে অনেকগুলো অনলাইনে টুলস পাওয়া যায় যেগুলো ব্যবহার করলে এই ধরনের কাজগুলো নিমিষেই করে ফেলা সম্ভব। এ জন্য যারা এই সেক্টরে কাজ করে তারা যদি একটু জ্ঞানী কিংবা স্মার্ট হয়ে থাকে তাহলে খুব সহজেই তারা এই সেকশনে ভালো কিছু করতে পারবে।
আপনার যদি কম্পিউটার বা মোবাইল নিয়ে কাজ করার অভ্যাস থাকে, তাহলে এটি আপনার জন্য ভালো একটি অপশন। Fiverr, Upwork, বা Freelancer-এর মতো সাইটে ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টের অনেক কাজ পাওয়া যায়। আর এই কাজগুলো করার জন্য অবশ্যই প্রথম দিকে একটু এক্সপেরিয়েন্স অর্জন করার চেষ্টা করবেন তাহলে কাজ পাওয়া সহজ হয়ে যাবে।
শুরুতে হয়তো সাধারণ কাজ করতে হবে, কিন্তু একবার কাজ শেখার পর বড় বড় কোম্পানির সাথে কাজ করার সুযোগ পেতে পারেন। ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এটি একেবারে ঘরে বসে করা সম্ভব।
এছাড়া, এই কাজের জন্য খুব বেশি দক্ষতার প্রয়োজন হয় না। যেমন, ইমেইল লেখা, ডাটা এন্ট্রি করা, বা কাস্টমারের সাথে যোগাযোগ করা শেখা থাকলে সহজেই কাজ শুরু করতে পারবেন। আর সময়ের সাথে সাথে নিজের দক্ষতা বাড়ালে পেমেন্টও বাড়বে।
৯. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
আপনার যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটাতে ভালো লাগে, তাহলে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং হতে পারে আপনার জন্য অনলাইনে ইনকাম করার সবথেকে ভালো উপায়। এখানে আপনি কোম্পানি বা ব্র্যান্ডের পেজ ম্যানেজ করবেন, পোস্ট প্রমোট করবেন এবং কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগ করবেন। ক্লায়েন্টের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করবেন এবং একটু ছোটমোটো কাজ থাকলে সেটা সেরে নিবেন এতটুকুই।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের চাহিদা বর্তমানে অনেক বেড়েছে। ছোট বড় সব ধরনের কোম্পানিই তাদের প্রোডাক্ট প্রমোট করতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে। আপনার কাজ হবে এই প্রমোশনে সাহায্য করা।
শুরুর জন্য আপনাকে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, বা টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কাজ করতে হবে। যেমন, পোস্ট তৈরির আইডিয়া দেয়া, কন্টেন্ট লিখে দেয়া, বা অ্যাডস রান করা—এসব কাজ করতে হবে। যদি আপনি ভালো কাজ করেন, তাহলে কোম্পানি আপনার ওপর আরও বড় কাজের দায়িত্ব দিবে।
এই কাজের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সাধারণ জ্ঞানই যথেষ্ট। আর আপনি যদি এর সাথে গ্রাফিক্স ডিজাইন বা অ্যাড ম্যানেজমেন্ট শিখে ফেলেন, তাহলে আয়ের পথ আরও খুলে যাবে।আর সব থেকে বড় বিষয় হচ্ছে বর্তমানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মাধ্যমে আপনি কাজগুলো খুব সহজেই আরো দ্রুত করতে পারবেন। এবং সমস্ত ধরনের সহযোগিতা চাইলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তথা চ্যাট জিপিটি কিংবা এরকম ওয়েবসাইট থেকে নিতে পারেন।
১০. প্রোডাক্ট রিসেলিং
প্রোডাক্ট রিসেলিং বলতে বোঝায়, অন্যের কাছ থেকে প্রোডাক্ট কিনে তা আবার অন্যদের কাছে বিক্রি করা অর্থাৎ কম দামে প্রোডাক্ট আয় করে সেটাকে বেশি দামে বিক্রয় করা। এটি এক ধরনের ব্যবসা বলা চলে, যেখানে আপনি কোনো প্রোডাক্টের মালিক না হয়েও তা বিক্রি করে লাভ করতে পারবেন।
ধরুন, আপনি হোলসেল মার্কেট থেকে প্রোডাক্ট কিনলেন, তারপর তা অনলাইনে বা নিজের এলাকায় বিক্রি করলেন। এটি হতে পারে জামাকাপড়, গয়না, বা ইলেকট্রনিক পণ্য, এসেন্সিয়াল পণ্য ইত্যাদি। ফেসবুক পেজ বা গ্রুপ খুলে আপনি এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
প্রোডাক্ট রিসেলিংয়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং চ্যালেঞ্জিং বিষয় হলো, প্রোডাক্টের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা এবং কাস্টমারের আস্থা অর্জন করা। প্রথম দিকে হয়তো অল্প লাভ করবেন, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আপনার নেটওয়ার্ক বাড়লে আয়ও বাড়বে। এবং প্রোডাক্ট এর কোয়ালিটি যত ভালো হবে বিজনেস তত বড় করতে সক্ষম হবেন।
শুরুর জন্য খুব বড় ইনভেস্টমেন্ট দরকার হয় না। ছোট খাটো কিছু প্রোডাক্ট নিয়ে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করতে পারেন। আর যদি ভালো রেসপন্স পান, তাহলে ভবিষ্যতে নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করার পরিকল্পনাও করতে পারেন। মূলত ছাত্ররা অবসর সময়ে এ ধরনের কাজগুলো খুব সহজে করে নিতে পারবেন তবে এই ধরনের কাজ করার ক্ষেত্রে মেধা এবং আইডিয়া দুটোই অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
উপসংহার
রিসার্চ থেকে জানা যায় যে, বর্তমান বিশ্বের যে প্রতিষ্ঠানগুলো দাঁড়িয়েছে তার প্রায় ৭০% ই ছাত্রদের দ্বারা গঠিত। অর্থাৎ এই সময়ে চাইলে বড় কিছু করা সম্ভব এবার এই সময়ে চাইলে দমিয়ে যাওয়া সম্ভব। ছাত্রজীবনে কিছু নতুন চেষ্টা করা মানেই নিজের দক্ষতাকে আরও শাণিত করা। ই-কমার্স হোক, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, বা প্রোডাক্ট রিসেলিং—সব কাজই আপনাকে একটা নতুন অভিজ্ঞতা দেবে।
আর টাকা উপার্জনের পাশাপাশি নিজের শেখার ইচ্ছাটা যদি থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে এগুলো অনেক কাজে লাগবে। এভাবে কাজ করতে করতে আপনি হয়তো বুঝতে পারবেন, কোন কাজে আপনার সবচেয়ে বেশি আগ্রহ। নিজের সময় আর আগ্রহ অনুযায়ী কিছু কাজ বেছে নিলে, ছাত্রজীবনটা শুধু পড়াশোনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আরও অর্থবহ হয়ে উঠবে। আর আপনি হয়তো আজকের এই ছোট্ট শুরু থেকেই একদিন একজন সফল পেশাজীবী বা উদ্যোক্তা হয়ে উঠবেন।
আশা করি আজকের এই আর্টিকেল আপনাদেরকে ছাত্র জীবনে ইনকাম করা যায় এরকম সেরা উপায় গুলো সম্পর্কে জানাতে সক্ষম হয়েছে। এ বিষয়ে গুলো সম্পর্ক যদি কোন প্রশ্ন থাকে কিংবা আরো জানার আগ্রহ থাকে তাহলে কমেন্ট করতে পারেন ভবিষ্যতে তাহলে প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।